দক্ষিণ এশিয়ার ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল (আইজিপি-এইচএফ) জুড়ে বায়ুদূষণ এখন জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য এক ভয়াবহ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক নতুন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারতসহ পাঁচটি দেশের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের মোট জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক তাদের ‘আ ব্রেথ অব চেঞ্জ: সলিউশনস ফর ক্লিনার এয়ার ইন দ্য ইন্দো-গাঙ্গেয় প্লেইনস অ্যান্ড হিমালয়ান ফুটহিলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে এ অঞ্চলের বায়ুদূষণের জন্য পাঁচটি মূল কারণকে দায়ী করা হয়েছে। এ গুলো হলো- রান্না ও ঘর গরম রাখতে কাঠ বা কয়লার মতো কঠিন জ্বালানি পোড়ানো, শিল্পকারখানায় ফিল্টার ছাড়াই জীবাশ্ম জ্বালানি ও বায়োমাসের অদক্ষ ব্যবহার, পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনের যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কৃষি জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং সার ও পশুবর্জ্যের অব্যবস্থাপনা এবং যত্রতত্র ও অবৈজ্ঞানিকভাবে বর্জ্য পোড়ানো।

তবে বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব নয়। বায়ু নির্মল করতে প্রতিবেদনটিতে মূলত ‘চারটি আই’-এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- তথ্য (ইনফরমেশন)- নির্ভরযোগ্য উপাত্তের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। প্রণোদনা (ইনসেনটিভস)- মানুষকে পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন বিকল্প বেছে নিতে উৎসাহিত করা। প্রতিষ্ঠান (ইনস্টিটিউশনস)- জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আইন মানা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া। অবকাঠামো (ইনফ্রাস্ট্রাকচার)- নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বৈদ্যুতিক পরিবহন ও উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির আর্থিক যুক্তি এখন অনেক শক্তিশালী। সরকারগুলোর উচিত পরিবার ও কৃষকদের এই প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়তা করা।

প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎচালিত রান্না, আধুনিক বয়লার ব্যবহার এবং বৈদ্যুতিক পরিবহনের প্রসার ঘটানো গেলে দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবেশ বিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার অ্যান জিনেট গ্লাউবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, লাখো মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সমন্বয় ও ধারাবাহিক সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি।