দ্য ডন ও এআরআই নিউজ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘টেমু সংস্করণ’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। তিনি বলেন, মোদি হচ্ছেন নেতানিয়াহুর মতো, তবে কমদামি বা সস্তা সংস্করণ। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে মোদিকে ‘কাশ্মিরের কসাই’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। টেমু (ঞবসঁ) হচ্ছে চীনের জনপ্রিয় একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। যেখানে খুব সস্তা দামে পণ্য পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক সময়ই সেগুলো হয় কম মানের বা মূল পণ্যের নি¤œমানের অনুকরণ। অর্থাৎ কম দামি ও কম মানের কপি বোঝাতেই এ তুলনাটি করা হয়।
দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল বলেন, ‘মোদি হচ্ছেন নেতানিয়াহুর মতো, তবে টেমু (কমদামি) সংস্করণ। যেমনটা টেমুতে পাওয়া যায়। আমরা ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা নেতানিয়াহুর মতো নেতিবাচক উদাহরণ অনুসরণ না করে।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভারত ইসরাইলের খারাপ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। মোদিকে ‘কাশ্মিরের কসাই’ আখ্যায়িত করে বিলাওয়াল বলেন, ‘মোদি কাশ্মিরের মতো সিন্ধু উপত্যকাতেও একই রকম দমননীতির চেষ্টা করছেন।’
বিলাওয়াল বলেন, ‘মোদি কাশ্মিরের মতো সিন্ধু উপত্যকাতেও একই রকম দমননীতির চেষ্টা করছেন।’ পাকিস্তান ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ এবং ‘র’ যদি একসঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে সন্ত্রাস কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি, ‘যদি এই দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একসাথে বসে কাজ করে, তাহলে ভারতের মাটিতে এবং পাকিস্তানেও সন্ত্রাস অনেক কমে যাবে।’
জাতিসংঘ সফরের সময় চীনা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি দাবি করেছেন, পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল, কিন্তু ভারত সেই ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করতে এক মাস সময় নিয়েছিল। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য এবং কাশ্মীর ইস্যু জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
বিলাওয়াল বলেন, পাকিস্তান সবসময় সংলাপের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ভারত বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি শান্তির পক্ষে অনুকূল নয়। তিনি আরও বলেন, ভারতের একগুঁয়ে মনোভাব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পথে বড় অন্তরায়। পাকিস্তান বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে যাতে নয়াদিল্লির আগ্রাসী অবস্থান বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যায়। কাশ্মীর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘে ভারতের আগ্রাসনের প্রমাণ উপস্থাপন: নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিলাওয়াল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ক্যারোলিন রড্রিগেজ বারকেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরেন এবং মোদি সরকারের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলোÍবিশেষ করে ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করে পানিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারেরবিষয়ে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পেহেলগাম হামলার পর কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালায় এবং মিথ্যা অভিযোগ তোলে। তারা নিজেদের জনগণের কাছেও সত্য গোপন করেছে। বাস্তবতা হলো, ভারত সেই সংঘর্ষে পরাজিত হয়েছিল এবং তা স্বীকার করতে এক মাস সময় নিয়েছে। পাকিস্তান ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোকে ভারতের আগ্রাসনের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধিকে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রও হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশকেও পাকিস্তানের অবস্থান জানানো হয়েছে।