ইন্টারনেট : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের জেরে তীব্র গণবিক্ষোভে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে নেপাল। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীই হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নয়তো আত্মগোপনে আছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে, এমনকি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সংসদ ভবনও।

পুলিশের দমন-পীড়নে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। দেশে বর্তমানে কোনো কার্যকর সরকার নেই এবং সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের সিদ্ধান্তকে বিক্ষোভের কারণ মনে করা হলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল কারণ হলো রাজনৈতিক নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি ও সামাজিক বৈষম্য। তাই বিক্ষোভের সময় রাজনৈতিক নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে নেপো কিডসদের বিলাসী জীবনযাত্রা জনগণের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। যখন সাধারণ নেপালিরা বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়েদের বিলাসবহুল জীবন এবং সামাজিক মাধ্যমে তার প্রদর্শন তরুণদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

ক্ষোভের কেন্দ্রে নেপো কিডস: টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, রেডিট এবং এক্স-এর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নেপো কিডসদের বিলাসবহুল গাড়ি, দামি ডিজাইনার পোশাক, বিদেশে ছুটি কাটানোর ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়। এসব পোস্টে নেপো কিডদের বিলাসী জীবনের পাশাপাশি সাধারণ নেপালিদের দুর্দশার ছবিও পোস্ট করা হয়।

পরিচিত কয়েকজন নেপো কিডস

শৃঙ্খলা খাতিওয়াড়া: প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাতিওয়াড়ার ২৯ বছর বয়সী এই মেয়ে, যিনি একসময় মিস নেপাল ছিলেন, বিক্ষোভকারীদের কাছে বিশেষ সুবিধাভোগী অভিজাতদের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি ভাইরাল হলে প্রতিবাদকারীরা তার বাবার বাড়িতে আগুন দেয়। জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে তিনি ইনস্টাগ্রামে ১ লাখেরও বেশি অনুসারী হারিয়েছেন।

শিবানা শ্রেষ্ঠা: জনপ্রিয় গায়িকা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ শিবানা প্রায়ই তার বিলাসবহুল বাড়ি ও দামি ফ্যাশনের ভিডিও পোস্ট করেন। তিনি ও তার স্বামী জয়বীর সিং দেউবাও অনলাইনে আক্রমণের শিকার হন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে তাদের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

স্মিতা দহল: সাধারণ মানুষ যখন চাকরির জন্য লড়ছেন, তখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের (প্রচণ্ড) নাতনি স্মিতা দহল সামাজিক মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকার হ্যান্ডব্যাগের ছবি পোস্ট করে সমালোচিত হন। প্রতিবাদীরা প্রচন্ডর বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে।

সৌগত থাপা: আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার থাপার ছেলে সৌগতও তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ও অনলাইন প্রদর্শনের জন্য চিহ্নিত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ যেখানে দারিদ্র্যে মারা যাচ্ছে, সেখানে এই নেপো কিডসরা লক্ষ লক্ষ টাকার পোশাক পরছে।