আরব নিউজ : গাজা ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইসরাইলী পরিকল্পনাকে ‘সরাসরি প্রত্যাখ্যান’ করেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরাইলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তেল আবিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। গত সোমবার ইসরাইল নতুন করে গাজা ভূখণ্ডের কিছু অংশ দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। এতে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক গাজা দক্ষিণে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ, ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের নির্দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলী বসতি সম্প্রসারণের যে কোনো প্রচেষ্টার ঘোর বিরোধিতা করে এবং আন্তর্জাতিক প্রস্তাবনা ও আইনের প্রতি অবজ্ঞার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করার উপর জোর দেয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৌদি আরব ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের অবিচল সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এই বিবৃতির মাধ্যমে রিয়াদ স্পষ্ট করেছে, গাজা দখলের যেকোনো ইসরাইলী প্রচেষ্টা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিপন্থি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একক ভাবে চুক্তির ইঙ্গিত: ইসরাইলের জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার পদ্ধতি নিয়ে বিরলভাবে তীব্র সমালোচনা করেছেন এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা এবং সতর্ক করেছেন, ইসরাইল অংশ না নিলেও যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে একটি আঞ্চলিক চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইসরাইলী সংবাদমাধ্যম এন-১২। সোমবার রাতে হামাসের হাতে জিম্মি পরিবারগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, স্থবির আলোচনায় ইসরাইলের ভূমিকায় ওয়াশিংটন ক্রমেই হতাশ। ওই কর্মকর্তা বলেন, যদি এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ না করার মূল্যই তারা দিত, আজ ইসরাইলের জন্য সেই মূল্য আরও অনেক বেশি হবে শুধু জিম্মিদের জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর, এমনকি ইসরাইল না থাকলেও। হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হলো এর প্রস্তুতি, আর যদি ইসরাইল হুঁশিয়ার না হয়, তাহলে ‘ডিল অব দ্য মিলেনিয়াম’ ইসরাইলকে বাদ দিয়েই হবে। জিম্মিদের মুক্তির অচলাবস্থা ভাঙতেই এ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। গাজায় আটক থাকা ব্যক্তিদের পরিবারগুলো আশা করছিল, এই বৈঠকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো যাবে যাতে আলোচনা অগ্রসর হয়।
নাম প্রকাশ না করা ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, চলমান সামরিক অভিযান জিম্মিদের জীবনের জন্য হুমকি Í যা বর্তমান ইসরাইলী সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কারণ তারা সামরিক চাপে ছাড় আদায়ে বিশ্বাস করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি ইসরাইল এই ঐতিহাসিক ট্রেনটিতে চড়বে, যা ইতোমধ্যে স্টেশন ছেড়ে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা করবে না। এই বক্তব্যে জিম্মি পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বলছেন, কেবল বার্তাটিই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের টোন বা ভঙ্গির এই পরিবর্তনই তাদের বেশি ভাবিয়ে তুলেছে Í কারণ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা নিঃশর্ত মিত্র হিসেবে দেখে এসেছে। যদি ইসরাইলকে বাদ দিয়ে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্যমতে, এটি শুধু ইরানকে প্রতিহত করাই নয় বরং গোটা অঞ্চলকে স্থিতিশীল করার দিকেও এক বড় ধাপ হবে আর সেই প্রক্রিয়া থেকে জেরুজালেমকে ছিটকে পড়তে হবে।