টাইমস অব ইসরাইল : ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার দ্বিতীয় বছর পূরণ হলো গতকাল মঙ্গলবার। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ইসরাইলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছেন পণবন্দীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা।

ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলকে বলেছেন, ইসরাইলের সরকার গাজায় আটকে থাকা পণবন্দীদের কথা ‘ভুলে গেছে’। সরকারকে তা স্মরণ করিয়ে দিতেই এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

ইসরাইলের সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি; তবে তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে নিহতদের স্মরন করা হচ্ছে; নিহতদের ছবি পোস্টার আকারে বিভিন্ন জায়গায় টানানো হয়েছে, সেখানে শ্রদ্ধাও নিবেদন করছেন সাধারণ লোকজন।

এছাড়া গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে এবং গাজায় যুদ্ধের অবসানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন পরিকল্পনা হাজির করেছেন। সেই প্রস্তাবের ওপর মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখ শহরে গতকাল সোমবার বৈঠক শুরু হয়েছে ইসরাইল, হামাস এবং এ যুদ্ধের ৩ মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের প্রতিনিধি। আজ মঙ্গলবারেও বৈঠক অব্যাহত আছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরবেলায় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে পণবন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

হামাসকে এই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে পরের দিন থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু ইসরাইলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অভিযানে ৬৭ হাজার ১৬০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন। নিহত ও আহতের অধিকাংশই শিশু, নারী ও বেসামরিক মানুষ।

নিহত প্রকৃত সংখ্যা অবশ্য আরও বেশি। কারণ অনেকের দেহ ভবনে ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে থাকায় তাদেরকে হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি।

গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে সেখানে ত্রাণ সরবরাহও সীমিত রেখেছে ইসরাইল। ফলে খাবার, ওষুধ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে সেখানে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যের অভাবে শুধু অপুষ্টির শিকার হয়ে গত দুই বছরে গাজায় মৃত্যু হয়েছে ২ শতাধিকের। এই মৃতদের প্রায় সবাই শিশু।

গাজায় গত দুই বছরের অভিযানে হামাসের শীর্ষ নির্বাহী নেতা ইসমাইল হানিয়া, তার উত্তরসুরী এবং ৭ অক্টোবর হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ হামাসের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা, কমান্ডার এবং যোদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। হামাসকে সহযোগিতা করার দায়ে প্রতিবেশী দেশ লেবাননে বিমান অভিযান চালিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ-এর ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গোষ্ঠীটির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে অস্ত্রভাণ্ডার ও বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা। এককথায় হিজবুল্লাহর পুরো নেটওয়ার্ক তছনছ করে দেওয়া হয়েছে।

গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ ও আলোচনার ভিত্তিতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য গত দুই বছর ধরে ইসরাইরের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিনে নেতানিয়াহুর ওপর ব্যাপক ভাবে চাপ এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে। তবে নেতানিয়াহু এসব চাপ এবং আহ্বানে আমল দেননি। তিনি গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরেও ইসরাইলি দখলদারিত্ব বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে গত ২২ অক্টোবর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে আয়োজিত বৈশ্বিক সম্মেলন এবং সেই সম্মেলনে এবং সম্মেলনের আগে ও পরে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, লুক্সেমবার্গসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অবশ্য সেই সম্মেলন বয়কট করেছিল, তবে ইউরোপের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় টনক নড়ে ইসরাইলের। ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হতে তাই বেশি সময় নেননি নেতানিয়াহু।