এএফপি, রয়টার্স : অভিবাসীদের ওপর নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) সরঞ্জাম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কর্তৃপক্ষ একই পদ্ধতি ব্যবহার করে মার্কিন নাগরিক নন, এমন ব্যক্তি যাঁরা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের নিশানা বানাচ্ছে। গত বুধবার লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ অভিযোগ তুলেছে।

অ্যামনেস্টি বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের নথিসহ বিভিন্ন দলিল পর্যালোচনা করে দেখেছে, এআই কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা সফটওয়্যার গণনজরদারি ও মানুষকে চিহ্নিতকরণের সুযোগ তৈরি করছে। এটি প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে সেখানকার নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিদের নিশানা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সংস্থাটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও মেক্সিকান-আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী এরিকা গুয়েভারা-রোসাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের গণবিতাড়ন কার্যক্রমে ও ফিলিস্তিনপন্থী মতপ্রকাশ দমন করতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপকারী এআইনির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘এমন তৎপরতায় বেআইনি আটক ও গণবিতাড়নের একটি ধারা গড়ে উঠেছে। এটি অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ভীতি সঞ্চারকারী প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলছে।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের নথিসহ বিভিন্ন দলিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এআই কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা সফটওয়্যার গণনজরদারি ও মানুষকে চিহ্নিতকরণের সুযোগ তৈরি করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন প্রশাসন অভিবাসী, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর নজরদারি করতে এআই সরঞ্জাম ব্যবহার করছে, যা তাদের ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ উদ্যোগের অংশ। মার্কিন পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের এ উদ্যোগের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ, ভিসার অবস্থা খতিয়ে দেখা ও নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিসায় অবস্থানকারীদের ঝুঁকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়নের মতো বিষয় রয়েছে।

গুয়েভারা-রোসাস বলেন, ‘বাবেল এক্স ও (মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি) প্যালান্টির তৈরি করা সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম ইমিগ্রেশন ওএস যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রশাসনে তথ্য বিশ্লেষণ, নজরদারি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি অভিবাসী, শরণার্থী ও ভিসাধারীদের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।’

এর ফলে বেআইনি আটক ও গণবিতাড়নের একটি ধারা গড়ে উঠেছে, যা অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ‘ভীতি সঞ্চারকারী প্রভাব’ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাবেল এক্স হলো একটি এআইভিত্তিক সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য অনলাইন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং ব্যক্তি বা দলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা হয়। এটি সরকারের নজরদারি ও শনাক্তকরণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারে। অ্যামনেস্টির যুক্তি, এআইভিত্তিক নজরদারি সরঞ্জামের ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতাকে ‘পিছিয়ে থাকা মানুষদের ইচ্ছেমতো বিতাড়নের’ দিকে উৎসাহিত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।