আল জাজিরা, আনাদোলু, বিবিসি, ইপিএ : জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য না পৌঁছে, তাহলে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। বিবিসি রেডিও ৪-এর আজকের প্রোগ্রামে আন্না ফস্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। টম ফ্লেচার জানান, ইসরাইল ১১ সপ্তাহের অবরোধ তুলে নেওয়ার পর সোমবার মাত্র ৫টি ত্রাণবাহী লরি গাজায় ঢুকেছে।

তবে এখনও সেগুলোর সাহায্য স্থানীয় জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। তবে তিনি আশা করছেন মঙ্গলবার গাজায় ১০০টি লরি প্রবেশ করার কথা। তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা প্লাবনের মতো প্রবাহিত করতে হবে।’ তার বদলে সেখানে যে সাহায্য ঢুকছে তাকে তিনি সমুদ্রে এক ফোটা পানির সঙ্গে তুলনা করেছেন। টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘ ৪৮ ঘণ্টায় যত বেশি সম্ভব এই শিশুদের বাঁচাতে চাই।’

এই সংখ্যা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী মাঠ পর্যায়ের দল রয়েছে, যারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।’ এই হামলাটি এমন সময়ে হলো যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন গাজায় ‘নতুন করে সামরিক অভিযান বন্ধ করে এবং মানবিক সাহায্যের প্রবাহ বাড়ায়।’ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যুদ্ধ আগামীকালই শেষ হতে পারে’ যদি হামাস পণবন্দিদের মুক্তি দেয় এবং অস্ত্র ফেলে দেয়। গাজায় বর্তমানে আনুমানিক ৫৮ জন পণবন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরাইলী হামলায় মধ্যরাত থেকে নিহত আরও ৩৮: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলা অব্যাহত রয়েছে। চলমান এই হামলায় মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে আরও ৩৮ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এদিকে হামলার জেরে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩৩৫০ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন।

দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহর থেকে ফিলিস্তিনীদের পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর মধ্যরাত থেকে ইসরাইলী বাহিনী গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে এবং আরও ৩৮ জনকে হত্যা করেছে। এদিকে কানাডা, ফ্রান্স এবং গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী হামলায় কমপক্ষে আরও ১৩৬ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ হাজার ৪৮৬ জনে পৌঁছেছে বলে সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী আক্রমণে আরও ৩৬৪ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৯৮ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলী বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৪০ ফিলিস্তিনী নিহত এবং আরও ৯ হাজার ৩৫৭ জন আহত হয়েছেন। ইসরাইলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরাইল।