ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের হামলায় একদিনে আরও ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা ইসরাইলী হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৬০০ ছাড়াল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার গাজাজুড়ে ইসরাইলী হামলায় অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬৪ হাজার ৬৫৬ জনে। পশ্চিম গাজা শহরে বাস্তুচ্যুত পরিবারের তাঁবুতে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইলী বাহিনী। এতে দুটি ফিলিস্তিনী পরিবারের অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম গাজা শহরের বহুতলবিশিষ্ট টিবা-২ আবাসিক ভবনে ইসরাইলী সেনারা সেনারা বোমাবর্ষণ করে। আগে থেকেই সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও হামলায় দুইজন নিহত হন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল,ওয়াফা , আনাদোলু, আল জাজিরা।
উত্তর-পশ্চিম গাজার নাসের স্ট্রিটে বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে ইসরাইলী ড্রোন হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আরেকটি ড্রোন হামলা হয় আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের কাছে প্যালেস্টাইন স্কোয়ারে একটি তাঁবুতে। এতে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। শেখ রাদওয়ান এলাকায় একত্রিত হওয়া ফিলিস্তিনীদের ওপরও গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইলী সেনারা। এতে একজন নিহত হন। ওই এলাকায় ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে। মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলী যুদ্ধবিমান। এতে একজন নিহত হন এবং অনেকে আহত হন। দেইর আল-বালাহ শহরে একটি তাঁবুতে ড্রোন হামলায় এক শিশুর মৃত্যু হয় এবং আরও অনেকে আহত হন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের জালাল স্ট্রিটে ইসরাইলী গোলাবর্ষণে চারজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন শিশু। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজায় ইসরাইলী অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এই অভিযানে পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং জনগণ চরম দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।
ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় : কাতারে হামাস নেতাদের ওপর সম্প্রতি ইসরায়েলের চালানো হামলা নিয়ে ফোনালাপে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে হামলার এ ঘটনায় কাতার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে কাতারে ইসরাইলী হামলা নিয়ে উত্তপ্ত ফোনালাপ হয়েছে। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প এই হামলার ঘটনায় নেতানিয়াহুর প্রতি নিজের “তীব্র হতাশা” প্রকাশ করেন। মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন— দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা ছিল “অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ”। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, মার্কিন সামরিক বাহিনী থেকে তিনি এই হামলার খবর পান, অথচ ইসরায়েল আগে থেকে কিছু জানায়নি। এর মাধ্যমে হামলা চালানো হলো এমন এক মিত্র দেশের ভূখণ্ডে, যারা গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। নেতানিয়াহু এর জবাবে বলেন, হামলার সুযোগের সময়সীমা খুবই কম ছিল, তাই তিনি সেটিই কাজে লাগান। পরে উভয়ের মধ্যে আরেক দফা ফোনালাপ হয়, যা তুলনামূলকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। এতে ট্রাম্প জানতে চান হামলা সফল হয়েছে কিনা, তবে নেতানিয়াহু নিশ্চিত উত্তর দিতে পারেননি। পরে হামাস জানায়, তাদের নেতৃত্ব ওই হামলা থেকে বেঁচে গেছে। তবে সংগঠনের পাঁচ সদস্য ও এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প ক্রমেই নেতানিয়াহুর ওপর বিরক্ত হয়ে উঠছেন। কারণ, নেতানিয়াহু বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে না জানিয়ে একতরফা আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর একসঙ্গে গাজা যুদ্ধ শেষ করতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ২০২৩ সারের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল–থানি বুধবার সিএনএনকে বলেন, দোহায় ইসরাইলী হামলার জবাবে আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত হচ্ছে। তিনি জানান, এ নিয়ে আরব ও ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “এই অঞ্চল থেকে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া আসবে। এটি বর্তমানে আমাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনার পর্যায়ে আছে।”
লেবাননে ইসরাইলী ড্রোন হামলা ॥ নিহত ১ : দক্ষিণ লেবাননে নতুন করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে একজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ইহুদিবাদী দখলদার বাহিনী দক্ষিণ লেবানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, জায়নবাদী শাসনের এই নতুন ড্রোন হামলাটি দক্ষিণ লেবানের আইন বাল শহরকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইন বাল ও আল-বাজুরিয়া শহরের মধ্যবর্তী সড়কে একটি মোটরসাইকেলকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়। আল-মায়াদিন জানিয়েছে, এই হামলায় একজন লেবানিজ নাগরিক নিহত হয়েছেন। হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইলী সেনাবাহিনী। এর আগে গত সোমবার লেবাননের ইকলিম আল-খাররুব অঞ্চলে বোমা হামলা চালায় ইসরাইলী সেনাবাহিনী। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হন।
ইয়েমেনে ইসরাইলী হামলা ॥ নিহত ৩৫: ইসরাইলী বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ প্রদেশে অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ১৩১ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সানার আল-তাহরির এলাকার আবাসিক ভবন, একটি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং আল-জাওফ প্রদেশের রাজধানী আল-হাজমের সরকারি কমপাউন্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে অনেকেই আটকে থাকতে পারেন। দমকল ও উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের বের করার চেষ্টা করছেন এবং হামলায় সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। হুথি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টিভি দাবি করেছে, হামলায় সানার দক্ষিণ-পশ্চিমের স্বাস্থ্য খাতের একটি মেডিকেল সেন্টার এবং আল-হাজমে স্থানীয় সরকারি কার্যালয় লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।