রয়টার্স: অধিকৃত পশ্চিম তীরে গত শনিবার ফিলিস্তিনি গ্রামবাসী, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকের একটি দলের ওপর হামলা চালিয়েছে কতিপয় ইসরায়েলি সেটেলার। নাবলুসের দক্ষিণে বেইতা গ্রামের কাছে একটি সেটেলার চৌকির পাশের এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা জলপাই সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। জানা গেছে, হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা, ক্লাব ও বড় পাথর নিয়ে ভুক্তভোগীদের ওপর চড়াও হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন রয়টার্সের এক সাংবাদিক এবং এক নিরাপত্তা উপদেষ্টা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, জনা দশেক সাংবাদিক সঙ্গে নিয়ে ৩০ জন গ্রামবাসী ও সমাজকর্মী জলপাই সংগ্রহে অংশ নিয়েছিলেন। তখন পাহাড়ের ওপরের চৌকি থেকে ডজনখানেক মুখোশধারী ব্যক্তি নেমে এসে হামলা চালায়। তারা রয়টার্সের আলোকচিত্রী রানিন সাওয়াফতাকে মারধর করে এবং তার ক্যামেরা ভেঙে দেয়। সঙ্গে থাকা রয়টার্সের নিরাপত্তা উপদেষ্টা গ্রান্ট বাউডেন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তাকেও পেটানো হয়। পশ্চিম তীরের ওই এলাকাটি আগে থেকেই সেটেলারদের সহিংসতার জন্য পরিচিত। ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহিংসতা শুরুর পর থেকেই এমন হামলার ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

হামলার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা প্রায়ই একসঙ্গে ফসল সংগ্রহে অংশ নেন, সহিংসতা নথিবদ্ধ করেন এবং সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেটেলাররা অন্তত ২৬৪টি হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এমন ঘটনাগুলো প্রায়ই তদন্ত হয় না এবং হামলাকারীরা খুব কম ক্ষেত্রেই শাস্তি পায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী জোনাথন পোলাক বলেন, প্রায় ৫০ জন সেটেলার হামলা চালায়। তারা সাওয়াফতাকে নির্মমভাবে পেটায়, সে মাটিতে পড়ে গেলে পাথর ছোড়ে এবং যারা সাহায্য করতে আসে তাদেরও আক্রমণ করে।

সাওয়াফতা ও বাউডেন দুজনই হেলমেট ও “প্রেস” লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায় ছিলেন। হামলার পর তাদের নাবলুসের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে সেনা পাঠায়। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেখানে কোনও সেনাসদস্য উপস্থিত ছিলেন না। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, আইডিএফ যে কোনো সহিংসতার নিন্দা জানায় এবং এলাকার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ চালিয়ে যাবে।

স্থানীয় পুলিশ ও আঞ্চলিক পরিষদের তরফ থেকে হামলার বিষয়ে কোনও বক্তব্য দেওয়া হয়নি। সেটেলার চৌকির অনেকগুলোই সাধারণত ইসরায়েলি সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়াই স্থাপিত। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অধিকাংশ দেশ ও ফিলিস্তিন এগুলোকে অবৈধ মনে করে, যদিও ইসরায়েলের এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।