যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি ও অত্যাধুনিক এফ-৩৫ মার্কিন যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এনডিটিভি, আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরকালে গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এ চুক্তি হয়। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশ বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানিসংক্রান্ত একটি ‘যৌথ ঘোষণা’ অনুমোদন করেছে। এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের জন্য শতকোটি ডলারের পারমাণবিক জ্বালানি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি তৈরি হবে। ‘পারমাণবিক শক্তির বিস্তার রোধ’–সংক্রান্ত কঠোর নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে এটা করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গুরুত্বপূর্ণ’ প্রতিরক্ষা চুক্তির একটি প্যাকেজও অনুমোদন করেছেন। এর মধ্যে ভবিষ্যতে সৌদি আরবে অত্যাধুনিক মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি-সংক্রান্ত চুক্তিও আছে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বৈঠকে সামরিক অস্ত্র চুক্তি, পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
যুবরাজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি বিনিয়োগ ৬০ হাজার কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ কোটি ডলার করা হচ্ছে।
কেন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে সৌদি
সৌদি আরবের সঙ্গে একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুমোদন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে সৌদি আরবকে উন্নত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া হবে।
এফ-৩৫ কী? এর ধরনগুলো কী কী?
এফ-৩৫ লাইটনিং ২ হলো পঞ্চম প্রজন্মের এক আসনের, এক ইঞ্জিনের স্টেলথ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। এই যুদ্ধবিমান আকাশে প্রাধান্য বিস্তার, স্ট্রাইক মিশন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসব ধরনের কাজেই সক্ষম।
এটির তিনটি প্রধান ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে
১. এফ-৩৫এ: সাধারণ টেকঅফ ও ল্যান্ডিং (সিটিওএল)
২. এফ-৩৫বি: স্বল্প দূরত্বে টেকঅফ এবং উল্লম্ব ল্যান্ডিং (এসটিওভিএল)
৩. এফ-৩৫সি: ক্যারিয়ার-ভিত্তিক অপারেশনের জন্য তৈরি
কেন এই ফাইটারগুলো বিশেষ?
এফ-৩৫ নির্মাতা লকহিড মার্টিন এই যুদ্ধবিমানটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধবিমান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আকাশে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিমানটির খ্যাতির বেশিরভাগই আসে এর স্টেলথ, উন্নত সেন্সর এবং একটি একক প্ল্যাটফর্মে উচ্চ-গতির কম্পিউটিং-এর সমন্বয় থেকে।
এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে শত্রু রাডার সহজে তাকে খুঁজে না পায় (স্টেলথ ক্ষমতা), এবং একই সঙ্গে বিমানটির চারপাশে কী ঘটছে তা প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এর মধ্যে থাকা ৩৬০-ডিগ্রি ক্যামেরা সিস্টেম ও অন্যান্য উন্নত সেন্সর চারদিকের ছবি ও তথ্য রিয়েল-টাইমে সরাসরি পাইলটের হেলমেটে বা স্ক্রিনে দেখায়।
সৌদি আরব কেন এফ-৩৫ চায়?
দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব মার্কিন অস্ত্রের অন্যতম বড় ক্রেতা হলেও এফ-৩৫ প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারেনি। এটি পরিবর্তন করতে পারলে সৌদি আরব তার বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে পারবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
ইরানের সঙ্গে বর্তমানে সম্পর্ক ইতিবাচক হলেও, অতীতে রিয়াদ ও তেহরান একাধিকবার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং পরস্পরকে হুমকি হিসেবে দেখেছে। সৌদি আরব এর আগেও ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। সংঘাতটি এখনও পুরোপুরি সমাধান হয়নি এবং বর্তমানে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত থাকলেও, আগামী কয়েক বছরে তা আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।