লাদাখে মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন ধরে বিক্ষোভ, সহিংসতা এবং আগুনের ঘটনা ঘটেছে। লেহ শহর সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কিছু সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। কী হয়েছে লাদাখে? সোনম ওয়াংচুকসহ ১৫ জন গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চার দফা দাবিতে অনশন চালাচ্ছিলেন। তাদের দাবি হলো লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ চালু করা, লেহ ও কার্গিলের জন্য একটি পৃথক লোকসভা আসন। অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এরপর লাদাখ অ্যাপেক্স বডির (এলএবি) যুব শাখা আন্দোলনের ডাক দেয়। বুধবার সকাল থেকে লেহ শহরে যুবকরা রাস্তা অবরোধ ও মিছিল শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা বিজেপি সদরদপ্তর ও হিল কাউন্সিল অফিসে পাথর ছোঁড়ার পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, জনতার সহিংসতার জবাবে তারা আত্মরক্ষায় গুলী চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও চারজন নিহত ও ৩০-এর বেশি পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন। সোনম ওয়াংচুক অনশন ভঙ্গ করলেন : ঘটনার পর সোনম ওয়াংচুক অনশন ভঙ্গ করে যুবকদের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা লাদাখে অস্থিরতা চাই না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই আমাদের পথ।’ তিনি জানান, এটি লাদাখের জন্য এবং তার জন্য অত্যন্ত দুঃখের দিন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, লাদাখের দাবিগুলো নিয়ে লেহ ও কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু দাবি ইতোমধ্যেই পূরণ হয়েছে। যেমন- সংরক্ষণ বৃদ্ধি, মেয়েদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ, ভোতি ও পুরগিতে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি। মন্ত্রণালয় বলেছে, সহিংসতার মূল কারণ কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি।

এটা কি জেনজির আন্দোলন? : সাংবাদিক স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, অনশনকারীর অসুস্থতার পর যুবদের একাংশ রাস্তায় নেমেছিল। তাই এটাকে আংশিকভাবে জেনজির আন্দোলন বলা যেতে পারে। তবে জাতীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, মূলত এটি যুবদের উদ্যোগে আন্দোলন ছিল। স্থানীয় বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, সহিংসতার পেছনে কংগ্রেসের হাত থাকতে পারে।

কারগিলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এএনআই জানায়, ব্যাপক বিক্ষোভের এক দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল লাদাখের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত ছিল। অঞ্চলটিকে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া এবং ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে গতকাল বুধবার সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন লাদাখে আর কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কোথাও চারজনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিক্ষোভে পুলিশের গুলী বর্ষণের প্রতিবাদে এবং লাদাখের সঙ্গে সংহতি জানাতে বৃহস্পতিবার ওই অঞ্চলের কারগিল শহরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সহিংসতায় চারজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হন। স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালালে পুলিশ গুলী ছোড়ে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে লাদাখের রাজধানী লেহের কোথাও কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে এবং পুলিশ সড়কগুলোতে নজরদারি চালাচ্ছে।’