এই মূহূর্তে গাজার অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৫ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার থেকে নতুন করে চালানো বর্বর ইসরাইলী হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৭১০ এবং আহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দারকান বলেন, জরুরি চিকিৎসা সেবার অভাবে অনেক আহতের মৃত্যু হয়েছে। কারণ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ওষুধের সরবরাহের এখনো ঘাটতি রয়েছে। আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট আই, এএফপি, আলজাজিরা, বিবিসি।

তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু এবং তাদের বেশিরভাগেরই আঘাত গুরুতর। এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের এক কর্মীও রয়েছেন। এছাড়া বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন, তবে উদ্ধার অভিযান যন্ত্রপাতির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীদের কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। টানা ১৮ দিন ধরে সীমান্ত বন্ধ থাকায় খাবার, ওষুধসহ জরুরি সরঞ্জাম পুরোপুরি ফুরিয়ে গেছে’। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৬১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১,১২,০০০-এর বেশি।

গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ২০২৪ সালের নবেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (ওঈঈ) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ওঈঔ) গণহত্যার মামলাও চলছে। তা সত্ত্বেও নিরীহ গাজাবাসীর ওপর অব্যাহতভাবে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে বর্বর ইসরাইল। গাজার মানবিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন থাকলেও, ইসরাইলী আগ্রাসনের ভয়াবহতা কমার কোনো ইঙ্গিত এখনো মিলছে না।

আলোচনা চায় হামাস : ইসরাইলের উচ্ছেদ নির্দেশের পর বুধবার ফিলিস্তিনীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে উত্তর গাজা উপত্যকার বেইত হানুন ছেড়ে গাজা শহরের দিকে ছুটছে। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরাইল আবারও বিমান হামলা শুরু করায় ভয়াবহ এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের অব্যাহত আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৭৭ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মঙ্গলবার ভোরে গাজায় পুনরায় বোমাবর্ষণে নিহত ৪৩৬ জনের মধ্যে ১৮৩ শিশু রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হামাস কর্মকর্তা তাহের আল-নোনো বলেছেন, গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরাইলী বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও তারা আলোচনার দরজা বন্ধ করেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, স্বাক্ষরিত চুক্তি থাকলে নতুন চুক্তির প্রয়োজন নেই।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীরা। গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তেল আবিবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হাজারো ইসরাইলী বিক্ষোভ করেছেন। ইসরাইলী হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ইসরাইলী আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে সৌদি আরব।

ইসরাইলের কাছে মানবতার

কোনও মূল্য নেই -- প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে এক রাতেই নারী ও শিশুসহ চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইল। নারকীয় এই তাণ্ডবকে ঘিরে ইসরাইলের কঠোর সমালোচনা করেছেন ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেত্রী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে “ঠাণ্ডা মাথায় খুন” বলে উল্লেখ করে ইসরাইলের সমালোচনা করে বলেছেন, তাদের কর্মকাণ্ড দেখায় যে- তাদের (ইসরাইল) কাছে মানবতার কোনও মূল্য নেই। ভারতীয় বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। মূলত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বুধবার কংগ্রেসের এই সংসদ সদস্য বলেন, ইসরাইলী সরকারের ৪০০ জনেরও বেশি নিরীহ বেসামরিক নাগরিকের “ঠান্ডা মাথায়” হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে, তাদের কাছে মানবতার কোনও মূল্য নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তারা (ইসরাইল) যত বেশি অপরাধমূলক কাজ করে, তত বেশি তারা নিজেদেরকে “কাপুরুষ” হিসেবে প্রকাশ করে।

গাজায় অভিযান বন্ধের দাবিতে ইসরাইলে

হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ এবং সেখানে অবরুদ্ধ জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ইসরাইলে। গত বুধবার রাজধানী জেরুজালেমে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ইসরাইলের নেতানিয়াহুবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছিল এই বিক্ষোভের আয়োজক। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্দেশে ‘আপনি সরকারপ্রধান, আপনিই দায়ী’, ‘আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়া ৬৭ বছর বয়সী নেহামা ক্রিসলার এএফপিকে বলেন, “আমরা শুধু তাকে (নেতানিয়াহু) স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জিম্মিদের মুক্তি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জেরুজালেমে বিগত বেশ কয়েক মাসের হিসেবে গতকালের বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড়। মাত্র ৩ দিন আগে ভয়াবহ বিমান হামলার পর এবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বুধবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে একটি নিরাপত্তা পরিধির সম্প্রসারণ এবং একটি আংশিক মুক্তাঞ্চল (বাফার জোন) তৈরি করতে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে নির্দিষ্ট স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।”