বিবিসি, এএফপি,রয়টার্স: যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা মধ্যরাতের পর গোলাবর্ষণ বন্ধ করেছে। কিন্তু সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কম্বোডিয়ার দিক থেকে গুলির মুখে পড়েছে। তবে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে যে মধ্যরাতের পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে কোনও সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়নি।
গত সোমবার মালয়েশিয়ায় শান্তি আলোচনার পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া একটি শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। তখন বলা হয়েছিল, মধ্যরাত থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইনথাই সুভারি বলেন, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থাই সেনাবাহিনী লক্ষ্য করে কম্বোডিয়ার সেনারা থাইল্যান্ডের কয়েকটি এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এটি চুক্তির ইচ্ছাকৃত লঙ্ঘন ও পারস্পরিক আস্থা দুর্বল করার একটি স্পষ্ট চেষ্টা। তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ড এর উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে। এটা তার আত্মরক্ষার আইনি অধিকার প্রয়োগের মধ্যে পড়ে। এদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেয়তা জোর দিয়ে বলেন, কোনো এলাকায় (যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর) একে অপরের বিরুদ্ধে কোনও হামলা হয়নি। থাইল্যান্ড সোমবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি "ইচ্ছাকৃতভাবে" লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে, যা দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ বন্ধে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির এটি একটি নড়বড়ে সূচনা, যা পাঁচ দিন ধরে চলা গোলাবর্ষণ ও রকেট হামলা বন্ধের উদ্দেশ্যে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ সত্ত্বেও, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সীমান্ত অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের আঞ্চলিক কমান্ডারদের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা হয় শুরু হয়েছে। বৈঠকে উভয়পক্ষ গুলি চালানো এবং ফ্রন্টলাইনে সেনা মোতায়েন বন্ধে সম্মত হয়েছে। তারা একে অপরকে তাদের মৃতদেহ সংগ্রহ করার অনুমতি দিতেও রাজি হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুটি দেশের মধ্যে শতাব্দীপ্রাচীন সীমান্ত বিরোধ নিয়ে উত্তেজনা বেড়ে যায় মে মাসে,যখন এক কম্বোডিয়ান সৈনিক এক সংঘর্ষে নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার থেকে চার দিনের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় তিন লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতে যুদ্ধবিমান, রকেট ও কামানের মতো ভারী যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সপ্তাহান্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন। মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাসভবনে এ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন থাই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। ছিলেন মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূতেরাও। আলোচনা শেষে আনোয়ার ইব্রাহিম ঘোষণা দেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘অবিলম্বে শর্তহীন’ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সম্পর্ক ২০০৮ সালে খারাপ হতে শুরু করে। ওই সময় বিতর্কিত অঞ্চলে অবস্থিত ১১শ শতকের একটি মন্দিরকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে নিবন্ধন করার চেষ্টা করে কম্বোডিয়া।
কিন্তু তা থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। গত মে মাসে দুই দেশের সম্পর্ক এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়।