ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী বাহিনী আবারও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। ভূখণ্ডটির বিভিন্নস্থানে চালানো এই হামলায় একদিনে কমপক্ষে ৭৮ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষও রয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এদিকে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের পাশে ইসরাইলী হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে নিহত ফিলিস্তিনীর সংখ্যা বেড়ে ৮৩৮ জনে পৌঁছেছে। টিআরটি ওয়ার্ল্ড

দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরে বাস্তুচ্যুতদের এক শিবিরে বিমান হামলায় ৯ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে এক বাণিজ্যিক ভবনে হামলায় নিহত হয়েছেন ৪ জন। এছাড়া ইসরাইলী সেনারা উত্তর গাজা ও গাজা শহরে আবারও হামলা জোরদার করেছে। গাজা শহরে এক অ্যামবুশে একটি ট্যাংকে রকেট হামলা ও পরে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলী চালানো হয়, এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলী গণমাধ্যম। এতে তিনজন ইসরাইলী সেনা নিহত হন। এরপর ইসরাইল ব্যাপক পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং টুফাহ ও শুজাইয়া এলাকার অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংস করে। ওয়াফা জানায়, শুধু গাজা শহরেই ২৪ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন এবং ডজনখানেক আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ সংস্থাগুলো ক্রমাগতভাবে গাজায় আরও ত্রাণ ঢোকানোর আবেদন জানাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জ্বালানির ঘাটতিতে বহু ডেসালিনেশন প্লান্ট, পাম্প স্টেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরাইল চলতিক বছরের ২ মার্চ থেকে প্রায় সব ধরনের জ্বালানি ঢোকানো বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে পরিষ্কার পানি, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স সবই প্রায় অচল। মিসর বলছে, ইসরাইল-ইউরোপ চুক্তি হলেও কিছুই বদলায়নি। গত সপ্তাহে ইসরাইল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানো নিয়ে একটি চুক্তি হয়। কিন্তু মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি জানিয়েছেন, বাস্তবে “কোনো পরিবর্তন হয়নি”। ইইউর পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, “মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে চুক্তি হলেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।” এদিকে কাতারে ইসরাইল ও হামাসের পরোক্ষ আলোচনা চলছে দ্বিতীয় সপ্তাহে। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলেই জানাচ্ছে সূত্রগুলো। এক কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমানে আলোচনা চলছে ইসরাইলী সেনাদের গাজায় মোতায়েন সংক্রান্ত মানচিত্র নিয়ে। পাশাপাশি দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমাতে নতুন পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে।” হামাস বলেছে, “নেতানিয়াহু বারবার আলোচনা ভেঙে দিচ্ছেন। তিনি কোনো সমঝোতা চান না”। অন্যদিকে নেতানিয়াহুর ওপর দেশের অভ্যন্তরে চাপ বাড়ছে, সেনা হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, যুদ্ধ দীর্ঘ হচ্ছে, ক্ষোভ জমছে।

ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে গাজায় তিন ইসরাইলী সেনা নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে দখলদার ইসরাইলের তিন সেনা নিহত হয়েছে। গত সোমবার গাজার উত্তরাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ট্যাংকের ভেতর থাকা এক কর্মকর্তা আহত হন। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ট্যাংকে কীভাবে এমন প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল সেটি নিরূপণের চেষ্টা করছে আইডিএফ। তাদের ধারণা সেনাদের ভুলের কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। নিহত সেনারা হলেন স্টাফ সার্জেন্ট সোহাম মেনাহেম, সার্জেন্ট সোলমো ইয়াকির শ্রেম এবং সার্জেন্ট ইউলি ফাক্তর। যে কর্মকর্তা আহত হয়েছেন তার নাম প্রকাশ করেনি ইসরাইলী সেনাবাহিনী। আহত-নিহত চার সেনাই ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের ৫২নং ব্যাটালিয়নে ছিলেন। ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের প্রাথমিক তথ্যে বলেছিল, হামাসের যোদ্ধারা হয়ত ট্যাংকে রকেট থেকে গ্রেনেড ছুঁড়েছিল। তবে পরবর্তীতে তারা জানায়, তাদের বিশ্বাস ট্যাংকের উপরিভাগে থাকা ত্রুটিপূর্ণে শেলের কারণে ট্যাংকের ভেতর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ইসরাইলী বাহিনী এখন প্রাণঘাতী এ বিস্ফোরণের সম্ভাব্য একাধিক কারণ তদন্ত করছে।

লেবানন-সিরিয়ায় ইসরাইলের হামলা

সিরিয়ার সুইদা শহর ও লেবাননের বাক্কা উপত্যকা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। গত কয়েকদিন ধরে দ্রুজ সংখ্যাগুরু শহর সুইদাতে দ্রুজ ও বেদুঈন জাতির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষ ঠেকাতে শহরটিতে প্রবেশের চেষ্টা করে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। তারা ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র নিয়ে আসেন। তবে দখলদাররা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকটি ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিরীয় বাহিনী শহরটিতে প্রবেশ করার পর দখলদাররা সেখানে আবারও হামলা চালিয়েছে। দ্রুজরা আলাদা ধর্মের লোক। দখলদার ইসরাইল হুমকি দিয়েছে দ্রুজদের তারা কোনো ক্ষতি করতে দেবে না। এমন অজুহাত দেখিয়ে সিরিয়ার সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা। সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুরহাফ আবু কাসরা পরবর্তীতে জানিয়েছেন, দ্রুজ ও বেদুঈনরা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। অপরদিকে লেবাননের বাক্কা উপত্যকায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলী সেনারা। দখলদারদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর রেদওয়ান ফোর্সের সেনারা পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। এ কারণে সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। যদি হিজবুল্লাহ আবারও পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে পুনরায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন এ দখলদার।