দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ, সহাবস্থান করতেই হবে। তাই ভারতকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে শত্রুতা বজায় রাখবে নাকি সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে। এছাড়া কাশ্মির সমস্যার সমাধান ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক এগোবে না বলেও জানান তিনি। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানের অগ্রগতি, বিশ্ব সংকট এবং সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্য । প্রথানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, “ভারতের সঙ্গে যে কোনো আলোচনাই হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে।
পাকিস্তান ও ভারত চারটি যুদ্ধ করেছে, এতে কোটি কোটি ডলার খরচ হয়েছে। অথচ এই অর্থ ব্যয় করা উচিত ছিল স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক নির্মাণে এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে।” শেহবাজ স্পষ্ট করে দেন, কাশ্মির সমস্যার সমাধান ছাড়া ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগোতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সর্বশেষ বড় সামরিক সংঘর্ষ হয় চলতি বছরের মে মাসে। সে সময় পাকিস্তানের ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে ভারতের বিমান হামলার পর পাল্টা অভিযান চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ (লোহার দেয়াল) নামে ওই অভিযানে পাকিস্তান জানায়, তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ব্যয়বহুল ফরাসি রাফালে ফাইটার জেটও ছিল। এ সংঘাতে উভয় দেশই প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতির শিকার হয়। ৮৭ ঘণ্টা স্থায়ী এই সংঘাত শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে গড়ায়। মূলত এই সংঘাত পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কাও জাগিয়েছিল। শেহবাজ শরিফ বলেন, “কোটি কোটি কাশ্মিরির রক্ত বৃথা যেতে দেব না”। একইসঙ্গে তিনি গাজা প্রসঙ্গে বলেন, যেখানে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, সেটি এই অঞ্চলের সঙ্গে চিরদিনের জন্যই সম্পর্কিত থাকবে, মানুষ চায় বা না চায়। পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী আবারও জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আলোচনায় রাজি, তবে শর্ত হলো সমতার ভিত্তিতে। তার ভাষায়, “ন্যায্যতা ও সম্মান দিয়েই যেকোনো আলোচনার পথ চলা উচিত।” তিনি বক্তব্যে অপারেশন ‘বুনইয়ানুম মারসুস’, অর্থনীতি ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন।
পারমাণবিক ছাতার নিচে আশ্রয় খুঁজে নিলো সৌদি আরব : পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার নিচে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় আস্থার ঘাটতি ও ইরানকে ঠেকানোর প্রয়োজনে দেশটি এবার পাকিস্তানের পরমাণু প্রতিরক্ষার ছাতার নিচে অবস্থান নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দীর্ঘদিনের সামরিক সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে সৌদি আরব ও পাকিস্তান সম্প্রতি স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করেছে। এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কোনও এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই উভয় দেশের ওপর আক্রমণ।” একজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, এই পদক্ষেপ হঠাৎ নেওয়া হয়নি; বরং এটি বহু বছরের আলোচনার ফল।
কোনও নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নয়, বরং সৌদি-পাকিস্তান ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে ‘প্রাতিষ্ঠানিক রূপ’ দেওয়ার জন্য এই ঘোষণা এখন প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে রিয়াদ-ইসলামাবাদের সামরিক সম্পর্কের মধ্যে ছিল যৌথ সেনা প্রশিক্ষণ, বার্ষিক মহড়া, অস্ত্র উৎপাদন এবং সৌদি ভূখণ্ডে নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন। কিন্তু এবার এসএমডিএর মাধ্যমে পাকিস্তানের পরমাণু প্রতিরক্ষার ছাতার নিচে কার্যত প্রবেশ করেছে সৌদি আরব। আর এই চুক্তির সময়টাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর আস্থার ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান হুমকির মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করার প্রয়োজন সব মিলিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এ চুক্তিতে যেতে বাধ্য করেছে রিয়াদকে।
অবশ্য অনেক দিন ধরেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি ব্যাপক প্রতিরক্ষা চুক্তি অর্জন করতে চাইছিল সৌদি আরব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্তে জোর দেওয়ায় রিয়াদ পিছিয়ে আসে। গাজা যুদ্ধ আরও গভীর পর্যায়ে পৌঁছানোয় এখন সেই শর্ত রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ও প্রায় অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র শুধু অস্ত্র বিক্রি আর অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ফলে রিয়াদ বুঝেছেÍ ওয়াশিংটন অস্ত্র দেবে, কিন্তু প্রতিরক্ষার ছাতা দেবে না। এর মধ্যে সংকট আরও ঘনিয়ে এসেছে। চলতি বছরই প্রতিবেশী কাতারে ইরান সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, আর কয়েক সপ্তাহ আগে দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। এরপর জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলন হলেও উপসাগরীয় দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কার্যকর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সেই মুহূর্তেই সৌদি আরব ইসলামাবাদের দিকে ঝুঁকেছে।
সৌদি-পাকিস্তান পুরোনো হিসাব নতুন বাস্তবতা: পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির পেছনে সৌদি আরবের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো দেশভাগের ধাক্কা সামলে ঘোষণা দেন ঘাস খেয়ে হলেও আমরা বোমা বানাবো”। তখনই তিনি সৌদি বাদশাহ ফয়সালের কাছে সহায়তা চান এবং রিয়াদ গোপনে সেই সহায়তা দেয়। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান পারমাণবিক পরীক্ষা চালালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় দেশটি বিপর্যস্ত হয়। তখনও সৌদি আরব চার বছরের জন্য প্রায় ৩৪০ কোটি ডলারের তেল ঋণসুবিধা দেয়। এ কারণেই সৌদি প্রিন্স তুর্কি বিন ফয়সাল একসময় বলেছিলেন “বিশ্বে দুই দেশের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর কোথাও নেই।” ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক সক্ষমতা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরেই বিকল্প খুঁজছিল সৌদি আরব। পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এখন সেই বিকল্পকেই বাস্তব রূপ দিচ্ছে।