ইন্টারনেট: ন্যয়েশোয়ানস্টাইন জার্মানির অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। এখন এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, যদিও অনেক আগেই পর্যটনকেন্দ্রটির এই মর্যাদা প্রাপ্য ছিল। পাহাড়ের উপর নির্মিত দুর্ভেদ্য এই দুর্গ যেন রূপকথার গল্প। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আল্পসের কোনায় তৈরি এই দুর্গটি দ্রুতই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। এতটাই সুখ্যাতি যে ডিজনি কর্পোরেশনের লোগোর মধ্যে ন্যয়েশোয়ানস্টাইনের প্রকরণ রয়েছে। জার্মান রাজ্য বাভারিয়া এটির বর্তমান মালিক। ২০০১ সাল থেকে রাজ্যটি ন্যয়েশোয়ানস্টাইনকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছে। প্রতিবছর দশ লাখ পর্যটক দুর্গটি প্রদর্শন করেন। ১৮৬৪ সালে দ্বিতীয় ল্যুডভিগ মাত্র ১৮ বছর বয়সে বাভারিয়ার রাজার মুকুট পরার পর দুর্গ তৈরির উচ্চাভিলাসী প্রকল্প হাতে নেন। ন্যয়েশোয়ানস্টাইন থেকে এই প্রকল্প শুরু হয়। ন্যয়েশোয়ানস্টাইন গাইড প্যাট্রিক কর্ব বলেন, “তিনি এক জটিল এবং বিপরীতমুখী চরিত্রের মানুষ ছিলেন। অবশ্যই একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, খামখেয়ালী এবং তার বয়স যত বেড়েছে ততই এসব প্রকট হয়েছে। এবং এটি সম্ভবত আরেকটি কারণ যে, তিনি কেন সবকিছু ছেড়ে নিজস্ব জগত গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি নিজের মতো থাকতে পারেন।”

২০ বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণ কাজ করার পরও ন্যয়েশোয়ানস্টাইনের কাজ আসলে পুরোপুরি কখনোই শেষ হয়নি। অনেক কামরা খালি রয়ে গেছে। সিংহাসন হলে কোনো সিংহাসন নেই। ল্যুডভিগের মৃত্যুর পর দুর্গটির সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তার রূপকথার দুর্গ মধ্যযুগ সম্পর্কে যেমন ধারণা দেয় তেমনি কারিগরি উদ্ভাবনের এক বিস্ময়কর প্রদর্শনীও এটি। এটিতে গরম ও ঠান্ডা পানির সরবরাহের পাশাপাশি সেবকদের ডাকতে টেলিফোনও ছিল। রাজা দ্বিতীয় ল্যুডভিগের তৈরি আরো দুটি চমৎকার দুর্গ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের মনোনয়নের তালিকায় ছিল। আমারগাও আল্পসের লিন্ডারহফ প্যালেস একটি ছোট আকারের রোকোকো স্টাইলের দুর্গ। তারপর রয়েছে ভার্সাই অনুপ্রাণিত বারোক কমপ্লেক্স হেরেনকিমসি প্যালেস। এর হল অব মিররস ফরাসি মূলটির চেয়ে দুই মিটার বড়। দ্বিতীয় ল্যুডভিগ একবার বলেছিলেন, তিনি বাভারিয়াকে শিল্পের পীঠস্থান করতে চান। হেরেনকিমসি, লিন্ডারহফ এবং ন্যয়েশোয়ানস্টাইন গড়ার মধ্য দিয়ে তিনি সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়েছিলেন।