ব্রিটেনে জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের মধ্যে ইস্ট লন্ডনের একটি স্কুলে গড়ে উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ। নিউহ্যামের প্লাইস্টোতে অবস্থিত কাম্বারল্যান্ড কমিউনিটি স্কুল নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার পাউন্ড ব্যয় করছে। এর মূল লক্ষ্য হলো যাতে করে প্রতিটি নতুন শিক্ষার্থী যেন ইউনিফর্ম ও সরঞ্জামের অভাবে পিছিয়ে না পড়ে। এই উদ্যোগকে ঘিরে ইতোমধ্যে ইস্ট লন্ডনের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে যাওয়া ২৭০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে একটি নতুন ব্লেজার, একটি টাই ও একটি ল্যাপটপ দেওয়া হবে। এর খরচ বহন করবে সরাসরি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতিটি শিক্ষার্থী গড়ে প্রায় ৪০০ পাউন্ড মূল্যের সহায়তা পাবে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি একলাস রহমান বলেন, অনেক পরিবার ইউনিফর্ম ও কম্পিউটার কিনতে পারে না। কেউ কেউ এসে বলেছে, নির্দিষ্ট জিনিস কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা ভেবেছি, স্কুল হিসেবেই আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলো বর্তমানে আকাশছোঁয়া জীবনযাত্রার ব্যয়ে বিপর্যস্ত। দ্য চিল্ড্রেন’স সোসাইটির হিসাব বলছে, মাধ্যমিক স্কুলের ইউনিফর্মে গড় খরচ বছরে ৪২২ পাউন্ড। আর প্রাথমিকের জন্য ২৮৭ পাউন্ড। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ২৯ শতাংশ অভিভাবক ইউনিফর্ম কেনার জন্য খাওয়া-দাওয়া বা গরম রাখার ব্যয় কমানোর কথা ভেবেছেন, ৩১ শতাংশ পড়েছেন ঋণের ঝুঁকিতে।

ইস্ট লন্ডনের শিক্ষা খাতে একলাস রহমান পরিচিত নাম। তার নেতৃত্বে কাম্বারল্যান্ড স্কুলের মান ‘রিকোয়ার্স ইমপ্রুভমেন্ট’ থেকে উঠে এসেছে অফস্টেড-এর ‘গুড’ রেটিংয়ে। সামাজিক বৈষম্য কমানো এবং শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোই তার মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা চাই না কোনও পরিস্থিতি শিক্ষার্থীর ভালো শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াক। তাই সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিনিসগুলোর খরচ আমরা বহন করছি।

লন্ডনে শিক্ষার্থীদের জন্য লাখো পাউন্ডের নজীরবিহীন উদ্যোগ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষকের

২০২১ সালের স্কুল ইউনিফর্ম আইনের পরামর্শ অনুযায়ী, স্কুলগুলোকে ব্র্যান্ডেড পোশাক কমাতে বলা হয়েছে। কাম্বারল্যান্ড ইতোমধ্যে ব্র্যান্ডেড জিনিস বাদ দিয়ে অভিভাবকদের চাপ কমিয়েছে। ভবিষ্যতে শিশুদের কল্যাণ ও স্কুলস বিল এলে ইউনিফর্মে ব্র্যান্ডেড জিনিসের সংখ্যা আরও সীমিত হবে। তবে এসব সংস্কার সরাসরি অর্থ সহায়তা দেয় না, ফলে স্কুল ও স্থানীয় কাউন্সিলের উদ্যোগই কার্যকর সমাধান হয়ে দাঁড়ায়।

লন্ডনের নিউহ্যামে শিশু দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ। সংসদীয় গবেষণা বলছে, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি পরিবারগুলো এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই এ ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা সেখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। একলাস রহমান বলেন, এগুলো ছোট ছোট জিনিস হলেও মিলিয়ে অনেক খরচ হয়ে যায়। আমরা জানি পরিবারগুলো কত কষ্ট করছে এবং সবকিছু করতে চাই তাদের সাহায্যের জন্য।

শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে একলাস রহমানের মতে, এই সহায়তা কেবল অর্থ নয়, বরং এক বিনিয়োগ। তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণ হয়।