ফিলিস্তিনের এক বন্দিরও ওপর ইসরাইলী সেনাদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান আইনি কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইফাত টোমার-ইয়েরুশালমি। বিসিসি, ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) তিনি পদত্যাগ করে। ২০২৪ সালের আগস্টে ওই ভিডিও প্রকাশের অনুমতি তিনিই দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ভিডিও ফাঁসের পর ইসরাইলী সেনাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়।

এই ঘটনা ইসরাইলজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ডানপন্থি রাজনীতিকরা তদন্তের সমালোচনা করেন, এমনকি সেনা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারীরা ঘাঁটিতে প্রবেশ করলে বিক্ষোভকারীরা দুটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর একটি নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ইসরাইলের এন১২ নিউজে ফাঁস হয়। তাতে দেখা যায়, কয়েকজন সেনা এক বন্দিকে পাশে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, চারপাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন সশস্ত্র সৈন্য। পরে ভেতরে কী ঘটছে তা দেখা যাচ্ছিল না।

গত বুধবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ভিডিও ফাঁসের ঘটনার ফৌজদারি তদন্ত চলছে এবং টোমার-ইয়েরুশালমিকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

পদত্যাগপত্রে টোমার-ইয়েরুশালমি বলেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আইনবহির্ভূত কিছু করেননি; বরং সেনাবাহিনীর আইনি বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা করেছেন। যুদ্ধ চলাকালে সেই বিভাগটি ‘ভিত্তিহীন অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তুতে’ পরিণত হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গাজায় কোনও যুদ্ধবিরতি নেই : ট্রাম্প প্রশাসন যদি তাদের শান্তি পরিকল্পনা রক্ষা করতে চায়, তাহলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপর চাপ প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির যে কোনও আভাস এই সপ্তাহেই শেষ হয়ে গেল, ২৮শে অক্টোবর ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার সাথে সাথে। যদিও ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পরের দিন একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেন, বাস্তবতা স্পষ্ট: যে কোনও চুক্তি যা এক পক্ষকে ইচ্ছামত তার শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে দেয় তা কেবল কাগজে-কলমে অর্থহীন শব্দ। টেকসই মার্কিন চাপ ছাড়া, সেই গতিশীলতা আরও খারাপ হবে।

এই সপ্তাহের হামলার আগে ইসরাইলী লঙ্ঘন ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ১০ই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরাইল গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবাহ সীমিত করে চলেছে - যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য হামাসের সাথে চুক্তির একটি মূল উপাদান। হামাসের তার বাহিনীর উপর হামলার অপ্রমাণিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা নিয়মিতভাবে উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ১০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং আরও শতাধিক আহত হয়েছে। তারা অতিরিক্ত ক্রসিং খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যা ক্ষুধার্ত এবং দরিদ্র ফিলিস্তিনী বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সাহায্য প্রবাহকে আরও জোরদার করবে।

স্পষ্ট করে বলতে গেলে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনকারী যেকোনো পক্ষকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে হামাস, যারা অবশ্যই তাদের শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে এবং যেখানেই সম্ভব ইসরাইলকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। যদিও ইসরাইলী বাহিনীর উপর হামলার অনেক রিপোর্ট অতিরঞ্জিত বা ভুল, যদিও এর কিছু যোদ্ধা কমান্ড চ্যানেল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সম্ভাবনা কম, তারা একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে যা তাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ‘ফিলিস্তিনি ম্যান্ডেলা’ বারঘৌতির মুক্তির আশা

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কোবার গ্রাম এই মুহূর্তে উদযাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। দীর্ঘদিন ধরে বন্দি মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী গ্রামবাসী, তিনি ফিরলে কীভাবে উদযাপন করা হবে-সেই চিন্তায় বিভোর। ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করায় তার ভূমিকার জন্য পরিচিত বারঘৌতি। তাকে ফিলিস্তিনি ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ও বলা হয়।

তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আল-বারঘৌতি আমাকে জানান, তিনি ‘৮০ শতাংশ নিশ্চিত’ যে মারওয়ান বারঘৌতিকে শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে। আমাদের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরাও এই বিষয়ে একমত।

গাজা শান্তি নিয়ে চলমান শান্তি প্রচেষ্টা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতির দ্বৈত প্রভাবেই এই আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বারঘৌতির পরিবার এবং কোবার গ্রামের বাসিন্দারা।

গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরাইলকে তিনি মারওয়ান বারঘৌতিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বলতে পারেন, যাতে তিনি (বারঘৌতি) গাজায় প্রশাসনিক নেতৃত্ব দিতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, ইসরাইলী জিম্মিদের মুক্তির বদলে (ইসরাইলের কাছে) হামাস যে ২০ জন বন্দির মুক্তি দাবি করেছে, সেই তালিকায় মারওয়ান বারঘৌতিও রয়েছেন। যদিও ইসরাইলের এতে সম্মতি ছিল না।

জনমত জরিপ বলছে, ৬৬ বছর বয়সী মারওয়ান বারঘৌতি সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনী রাজনীতিবিদ। যে সময় রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল, তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর।

ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মারওয়ান বারঘৌতি।

পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ‘ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের’ জন্য নিজের সমর্থনকে অব্যাহত রেখেছিলেন।

ইসরাইলের ‘অপারেশন ডিফেন্স শিল্ড’ চলাকালীন তাকে ২০০২ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড তৈরির অভিযোগ তুলেছিল ইসরাইল, যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বারঘৌতি।