খাবার আনতে গিয়ে নতুন করে লাশ হয়ে ফিরেছেন ২৭ ফিলিস্তিনী। দখলদার ইসরাইলের সেনারা গতকাল মঙ্গলবার গাজায় ত্রাণ বিরতণ কেন্দ্রের কাছে গুলী ছুড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে ত্রাণ কেন্দ্রটিতে ওই ঘটনার সময় লোকজন ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান ছিল। বিবিসি, আনাদুলো।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করার পর তারা গুলী চালিয়েছে। গুলীর এই ঘটনায় আরও অন্তত ৯০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ওদিকে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে তারা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ করেছে। তবে তারা যে খাবার বিতরণ করেছে সেগুলো রান্না করে খেতে হবে কিন্তু সেখানকার মানুষের রান্নার সুবিধা কতটা আছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত রোববারও গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে গুলির ঘটনা ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত রাফাহ কেন্দ্রে মানুষ খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময় গুলীর কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। রেড ক্রস জানিয়েছিল, তাদের হাসপাতালে ১৭৯ জন হতাহত আসে যাদের মধ্যে ২১ জন মারা যান। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা মৃতের সংখ্যা ৩১ জন বলে জানায়। এই হত্যার ঘটনায় ইসরাইলের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫২ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছে গেছে। এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৪৭০ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২টি মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৫০৩ জন, ফলে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৩ জনে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, “বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না।” চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হয়েছিল, তা ১৮ মার্চে বাতিল করে ইসরাইল আবার হামলা শুরু করে। এরপর থেকে গাজায় বিমান ও স্থলপথে হামলা আরও তীব্র হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলী বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ২০১ ফিলিস্তিনী নিহত এবং আরও ১২ হাজার ৬৫২ জন আহত হয়েছেন। ইসরাইলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরাইল।