অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় খাদ্যাভাবে অনাহারে আরও পাঁচজনের মৃত্যুর হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন শিশু। গত শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহারে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১৭ জনে। ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজা উপত্যকা প্রায় অবরুদ্ধ। যে অল্প পরিমাণ ত্রাণ সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল, সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে গিয়ে আবার লোকজনকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। আল জাজিরা, এপি, টিআইবি ওয়ার্ল্ড।

গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করছে তা ‘লোকজনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম’। এরই মধ্যে গাজা উপত্যকা দখল এবং প্রায় এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সপ্তাহ শেষে বিরল এক বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। গাজায় কোনও অনাহার থাকার কথা ইসরায়েল অস্বীকার করে বলেছে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সীমান্ত থেকে ত্রাণ নিয়ে বিতরণ করছে না। আর জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, তারা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত অঞ্চল থেকে ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে অনবরত প্রতিবন্ধকতা ও বিলম্বের মুখোমুখি হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আরও ২১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত নতুন সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় অনেকগুলো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে। তারপর থেকে জিএইচএফের এসব কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এবং কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলোর পাহারাদার মার্কিন ভাড়াটে রক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ বলেছে, এদের মধ্যে অধিকাংশই নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে, ৮৫৯ জন জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে ও ৫১৪ জন ত্রাণবহরগুলোর রুটগুলোতে। জিএইচএফ জাতিসংঘের এই পরিসংখ্যান প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েল বিতর্কিত এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে তারা গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেবে বলে জানিয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে বাসিন্দাদের শহরটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য তারা চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে জানা যাচ্ছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এই নতুন পরিকল্পনা অনুমোদন করে শুক্রবার এর বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, নিরাপত্তা পরিষদ গাজা দখলের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে প্রাথমিকভাবে পুরো গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকেই মনোযোগ দেওয়া হবে, সেখানকার আনুমানিক ১০ লাখ বাসিন্দাকে আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মধ্য গাজার শরণার্থী শিবির এবং যেসব এলাকায় জিম্মিরা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলোও সেনা নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। এসব পরিকল্পনা ইসরায়েলের ভেতরেও তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিশ্বের বড় বড় শহর, যেমন: বুয়েনস আয়ার্স, লন্ডন এবং ইস্তাম্বুলে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্বনেতাদের কাছে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ অবসানের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

তুরস্ক সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে ---এরদোগান

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তৈয়ব এরদোগান। একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তুরস্ক সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক ফোনালাপে এরদোগান গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই আলোচনায় এরদোয়ান পুনর্ব্যক্ত করেন, আঙ্কারা সবসময় ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার সমর্থন করবে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সম্ভাব্য ফিলিস্তিন স্বীকৃতির বিষয়ে এরদোয়ান বলেন, এসব ঘোষণা মূল্যবান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পশ্চিমা বিশ্বে ইসরায়েলবিরোধী সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে এবং তুরস্ক এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।