বিবিসি , রয়টার্স,এএফপি : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে শান্তি চুক্তির একটি যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাস্প নিজেও। চুক্তি স্বক্ষরের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া সফরের প্রথম ধাপেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের পর রোববার ট্রাম্পের সামনে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর আগে গতকাল রোববার মালয়েশিয়া পৌঁছান ট্রাম্প। দেশটিতে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করবেন। আর এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হতে চলেছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক। দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ওই বৈঠকে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে বিমানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি আশাবাদী যে চীন নতুন চুক্তিতে রাজি হবে যেন আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঠেকানো যায়। এবারের সফরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও সাক্ষাতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালের পর এটিই হতে পারে দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। এদিকে মালয়েশিয়া সফর শেষে আজ সোমবার ট্রাম্প পৌঁছাবেন জাপানে। মঙ্গলবার তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এরপর ট্রাম্প আগামী বুধবার যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে। সেখানে তিনি এপেক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক হবে। আর এটি হবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
যে কারণে আসিয়ান সম্মেলনে নাই মিয়ানমার : মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের ৪৭তম সম্মেলন। সদস্য দেশ না হয়েও ‘আসিয়ান পার্টনার দেশ’ বা ‘ডায়ালগ পার্টনার’ হিসেবে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কুয়ালালামপুর পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু সম্মেলনে থাকছে না মিয়ানমার। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমার এমনি আগামী বছরের আসিয়ান সম্মেলনের সভাপতিত্বও মালয়েশিয়ার কাছ থেকে গ্রহণ করবে না। এর পরিবর্তে,এই দায়িত্ব পালন করবে ফিলিপাইনস।
২০২১ সালে আসিয়ান একটি ‘ফাইভ-পয়েন্ট কনসেনসাস’ ঘোষণা করেছিল, যেখানে মিয়ানমারে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা এবং সংঘাত নিরসনে সহায়তার জন্য বিশেষ আসিয়ান দূত নিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছিল। চার বছর পর সমালোচকরা বলছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব খুব সামান্যই দেখা গেছে। আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের সহ-চেয়ারম্যান চার্লস সান্তিয়াগো আল জাজিরাকে বলেছেন, তিনি আশা করছেন মিয়ানমার এবং গৃহযুদ্ধের পরিণতি শীর্ষ সম্মেলনে আলোচিত হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারএখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতির জন্য একটি অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন,এই গৃহযুদ্ধ মাদক ও অস্ত্র পাচার বৃদ্ধি করেছে এবং একই সঙ্গে শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে। যদিও সান্তিয়াগো মনে করেন না যে এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে খুব বেশি ফল আসবে। তিনি বলেন,এটি সবার জন্য একটি বড় ফটো তোলার সুযোগ হবে। কিন্তু নীতিগত দিক থেকে খুব বেশি কিছু ঘটবে না।
কুয়ালালামপুরে নাচলেন উৎফুল্ল ট্রাম্প : কুয়ালালামপুরে ট্রাম্প যখন বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নামছেন, বিমানবন্দরে তখন মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা হাতে অসংখ্য মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ট্রাম্প এরপর বিমানবন্দরে তাকে নেচে-গেয়ে স্বাগত জানানো একদল মালয়েশীয় ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশিল্পীর কাছে যান। স্থানীয় ওই শিল্পীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ হাত নেড়ে ও নাচের ভঙ্গিতে অংশ নেন তিনিও। ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। পরে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে করমর্দন করেন তিনি। পরে ট্রাম্প ভিড়ের মধ্যে থেকে দুটি পতাকা হাতে নেন এবং তা নেড়ে হাসিমুখে ছবি তোলার জন্য পোজ দেন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অত্যন্ত প্রফুল্ল মনে হচ্ছিল। পরে ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে গাড়িতে ওঠেন এবং সম্মেলনস্থলের পথে রওনা দেন। মূলত দুটি বড় আয়োজনে যোগ দিতে ট্রাম্পের এ মালয়েশিয়া সফর। একটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া। অন্যটি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি সই। গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি এ অঞ্চলে ট্রাম্পের প্রথম ও সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর।