২৩ মার্চ, আলজাজিরা, সিএনএন: যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বর্বর হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। মঙ্গলবার নতুন করে শুরু হওয়া হামলার পঞ্চম দিনেও ভয়াবহ স্থল হামলা চালিয়েছে দেশটির ‘দানব বাহিনী’। বিমান হামলা, কামানের গোলায় প্রতিদিনই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে গাজার অসহায় মানুষগুলোর বসতবাড়ি। গত শুক্রবারও রাতভর হামলা চালিয়েছে গাজার ঘনবসতি এলাকাগুলোয়। দেশে দেশে বিক্ষোভ, বিশ্বসম্প্রদায়ের ধিক্কার-কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না।

শুধু গাজা নয়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকেও গিলে খাচ্ছে ইসরাইল। বিশ্বের চোখ গাজার ওপর স্থির রেখে পশ্চিম তীরেও আগ্রাসি থাবা বসাচ্ছে ইসরাইল। ভোরের আলো ফুটতেই অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে তেড়ে আসে জেরুজালেমের বসতি স্থাপনকারীরা। নতুন নতুন ছুতো ধরে অভিযানে নামে সেনারা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলের পশুপালন স্থাপনা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি ১১-১৭ মার্চের মধ্যে ইসরাইলী আগ্রাসনে অধিকৃত অঞ্চলে ৫ জন নিহত হয়েছেন। পাশপাশি ৮২ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৩ জন শিশুও ছিল।

ইসরাইল-হামাস অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় আবারও পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করেছে তেল আবিব। গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিলিস্তিনীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি চালাচ্ছে সেনারা। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়ি। লোমহর্ষক এ স্থল হামলার শিকার হচ্ছে বেইত লাহিয়া, বেইত হানুন শহরসহ উত্তরাঞ্চলের বসতিগুলো। চলমান এ স্থল অভিযানে ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন ১৩০ জন। ৫ দিনে নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৪ জন। আহত হয়েছেন ১১৭২ জন। কেবল উত্তরাঞ্চলে নয়, মধ্য গাজায়ও শুক্রবার সারা রাত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। নেটজারিম করিডরে বোমায় বাড়িগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইলী বাহিনী। শনিবার সালাহ আল-দিন (ফিলাডেলফি) করিডরের মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের গাজার উত্তর অংশ বা দক্ষিণ অংশে প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উত্তর গাজার কিছু অংশে আর্টিলারি শেলিং চালিয়েছে। পূর্বদিকের তুফাহ আশপাশের একটি বাড়িতে ইসরাইলী হামলার কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, শুক্রবার ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর অ্যাশকেলনে গাজা থেকে বিমান হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়া হিসাবে এ হামলা চালানো হয়। তবে উত্তর গাজা থেকে হামাসের ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রকে ভূপাতিত করেছে তেল আবিব।

বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজের ‘একাংশ দখল’ নীতি মোতাবেক এবার গাজার উত্তর অংশই দখল করে নেবে ইসরাইল। মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের উত্তরাঞ্চলেও গোলাবর্ষণ করছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গাজার একমাত্র ক্যানসার হাসপাতাল ধ্বংস করেছে ইসরাইলী বাহিনী। শুক্রবার টার্কিশ-প্যালেস্টাইন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ও সংলগ্ন একটি মেডিকেল বিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। এটি গাজায় ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ছিল। হাসপাতালে হামলা নিয়ে ইসরাইলী বাহিনী বলেছে, হাসপাতাল এলাকায় হামাসের সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। তাই সেখানে হামলা চালানো হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বসতি স্থাপনকারীরা ৪৯টি নতুন অবৈধ পশুপালন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। যার মাধ্যমে তারা আশপাশের বিশাল জমি দখল করে নেয়। এসব এলাকার স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে এর প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়াও ফিলিস্তিনীদের অবাধে চলাচলে ৮৪৯টি বাধা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৮টি রাস্তা রয়েছে, যা প্রায়ই বন্ধ থাকে। ফলে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে না পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনীরা। এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে ৬০০ আবাসিক ভবন ইসরাইলী হামলায় পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে ৬৬টি ভবন ধ্বংসের মুখে। আবার কিছুদিন পরপরই পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনীদের কারাগারে বন্দি করা হয়। সেখানে তাদের ওপর চালানো হয় অমানবীয় অত্যাচার। শনিবারও জেনিনের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইয়াবাদ শহর থেকে এক পরিবারের বাবা-ছেলেকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলী সেনারা।