পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতায় ভারত খানিকটা অপ্রস্তুত ও বিস্মিত। সামরিক সংঘাতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের ক্ষতি ২২ গুণ বেশি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। স্কাই নিউজ, রয়টার্স, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, দি নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, ব্লুমবার্গ, আল-জাজিরা।

পাকিস্তানের চীনা প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মুখে ভারতের সামরিক বাহিনী অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক মাইকেল ক্লার্ক। তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের এই শক্তি-প্রদর্শনকে ঝুঁকি নেওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছে ভারত।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক ক্লার্ক বলেন, ‘পাকিস্তান যে সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে, তা দেখে ভারতীয়রা হয়তো খানিকটা বিস্মিত হয়েছে। পাকিস্তান বেশ কয়েকটি চীনা প্রযুক্তিনির্ভর সরঞ্জাম, বিশেষ করে জে-১০ যুদ্ধবিমান ও এইচকিউ-৯ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এসব দেখে ভারত কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘পাকিস্তানের একটি জে-১০ যুদ্ধবিমান ভারতের একটি রাফাল যুদ্ধবিমান (ফরাসি নির্মিত) ভূপাতিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এইচকিউ-৯ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’ ক্লার্কের মতে, পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের দক্ষতা মিশিয়ে যে সামরিক প্রস্তুতি দেখিয়েছে, তা ‘ভারতের জন্য বিস্ময়ের কারণ হয়েছে।’

তবে ক্লার্ক বলেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের যুদ্ধংদেহী মনোভাব ভারত প্রত্যাশা করেছিল। ‘ভারতের প্রতিক্রিয়ার একটি বড় অংশ ছিল জেনারেল মুনিরকে “শিক্ষা” দেওয়ার প্রয়াস। ভারত দেখাতে চেয়েছে, তারা যেকোনো সময় পূর্ণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’ তার কথায়, ‘এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারত তাদের একটি পশ্চিমা নৌবহরের বিমানবাহী রণতরী দল করাচি উপকূল থেকে মাত্র ৩০০ মাইল দূরে মোতায়েন করেছে। এটি স্পষ্টতই যুদ্ধের হুমকি ছিল, যদি না পাকিস্তান নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে।’

‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি উপায় বের করেছে, যার মাধ্যমে দুই দেশই পিছিয়ে আসতে রাজি হয়েছে’, বলেন ক্লার্ক।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগের ৮৭ ঘণ্টা ধরে চলা ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না- তা কাঁপিয়ে দিয়েছে অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও আকাশপথ। প্রতি ঘণ্টায় এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিতে উন্মোচিত হয়েছে আধুনিক যুদ্ধের ভয়াবহ মূল্য। এবারের সংঘাতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের ক্ষতি ২২ গুণ বেশি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। ভারতের স্টক মার্কেট, আকাশপথ ও বিনিয়োগে বড় ধরনের পতন হয়। ৮৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ধরে চলা এই সংঘাতের মধ্যে, ভারতের নিফটি ৫০ ও বিএসই সেনসেক্স সূচকসমূহ মিলিয়ে ৮২ বিলিয়ন ডলার মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন হারায়। উত্তর ভারতের আকাশপথ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বিমান ক্ষতি হয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) স্থগিত হওয়ায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় টিভি স্বত্ব, টিকিট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন থেকে। সামরিক অভিযানে খরচ পড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলার, রাফায়েল যুদ্ধবিমানের ক্ষতির মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার। পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় ক্ষতি দাঁড়ায় ২ বিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানো ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কমার ফলে প্রভাব পড়ে অতিরিক্তভাবে। মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, একই সময়ে পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচক ৪.১ শতাংশ কমে যাওয়ায় প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার হারায়। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) স্থগিত হওয়ায় ১০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় সম্প্রচার ও সম্পর্কিত খাত থেকে। আকাশপথ বন্ধ থাকায় বিমান খাতে ২০ মিলিয়ন ডলার লোকসান হয়। সামরিক অভিযানে দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ডলার, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে (বেরাখটার এবং রাদ এএলসিএম) খরচ হয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগ আস্থা কমে গেলেও তা পরিমাপ করা যায়নি। পাকিস্তানের মোট ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে, এই সংঘাতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ গুণ বেশি।

এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গেছে, চীনের তৈরি এই জে-১০সি জেট কিনতে এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে মিসর ও আজারবাইজান। অন্যদিকে ব্রাজিলের কাছে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিমান কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েল তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধরাশায়ী হলো চৈনিক প্রযুক্তির কাছে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই আলোচনায় এসেছে চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে পাকিস্তান পরিচালিত চীনা যুদ্ধবিমান কমপক্ষে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর আগ্রহ আরো বেড়ে যায়, যা যুদ্ধক্ষেত্রে বেইজিংয়ের প্রযুক্তির জন্য বড় মাপের অগ্রগতি বিবেচিত হচ্ছে।

দুই মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, পাকিস্তান আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে চীনা জেট ব্যবহার করেছিল। যার ফলে কমপক্ষে দুটি রাফায়েল ভূপাতিত হয়। বুধবার একজন ফরাসি কর্মকর্তাও সিএনএনকে বলেছেন, পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ভারত পরিচালিত একটি ফরাসি রাফায়েল জেট ভূপাতিত করেছে।

উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো উন্নত চীনা অস্ত্রব্যবস্থা পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এটি বিশ্বের প্রতিটি দেশের অস্ত্রশিল্প এবং বিশ্বব্যাপী চীনা সামরিক প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। জে-১০সির নির্মাতা এভিআইসি চেংডু এয়ারক্রাফট কম্পানি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার ২৫টি ইসরায়েলি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে।