এপি : গাজার পর বিশ্বের আরেক উন্মুক্ত কারাগার ভারত শাসিত কাশ্মীর। যেখানে স্বাধীনতার অর্থ শুধুই একটি শব্দ মাত্র। বাস্তবতা নেই। সীমাহীন সেনা চৌকি, কঠোর কারফিউ এবং মতপ্রকাশের অধিকারহীনতায় ঘেরা কাশ্মীরের মানুষের জীবন। ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, জাতিগত পরিচয় এবং ইতিহাসের গভীর ক্ষত একসঙ্গে মিশে তৈরি করেছে এমন এক বাস্তবতা, যেখানে অধিকার নয়, নিয়ন্ত্রণই নীতি।

২০১৯ সালের আগস্টে বিজিপি সরকারের নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (স্বায়ত্তশাসন) বাতিলের পর আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় কাশ্মীর। সেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর নেই। আছে শুধু সৌন্দর্যে ঘেরা ভূমি। এরই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরকে ‘দ্বিতীয় গাজা’ বলা যেন কোনো অতিশয়োক্তি নয়, বরং বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি। এ বিষয়ে একই অভিমত প্রকাশ করেছেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও। বলেছেন, কাশ্মীর একটি উন্মুক্ত কারাগারের মতো, যেখানে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং নজরদারিতে রাখা হয়। এপি। ইন্টারনেট। কাশ্মীরকে বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার হিসাবে অভিহিত করে মেহবুবা মুফতি বলেছেন, ২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর এখানকার জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার হারিয়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পুরো অঞ্চলকে যেন বন্দী করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সাথে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে। এ ছাড়া অভিযোগ তুলে মুফতি বলেছেন, কাশ্মীরকে যেন একটি কারাগারে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে মানুষ খোলা আকাশের নিচে থেকেও শ্বাস নিতে পারছে না। তার মতে, সরকারের এই দমনমূলক নীতিমালাই প্রমাণ করে, কাশ্মীর এখন আর স্বাভাবিক রাজ্য নয় বরং একটি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল। কাশ্মীর সমস্যা কোনো সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব নয়। এর শিকড় শতাব্দীর গভীরে প্রোথিত। ১৯৪৭ সালের পর ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর, মহারাজা হরি সিং ভারতীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অঞ্চলটি এক বিস্তীর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে কাশ্মীরকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ এবং সীমান্ত সংঘর্ষ ঘটে।

প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ সদস্যের সেনাবাহিনীর ৭-৮ লাখ সেনা সদস্যের নিñিদ্র বেষ্টনীতে ঘিরে রাখা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরকে। পুলিশ-আধাসামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনীও ভারতের অন্য সব রাজ্যের তুলনায় এখানে বেশি। অন্তর্ভুক্তির সময়ই ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়। যা তাকে অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় আলাদা সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়। কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট, বিজেপি সরকার এই অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে। সেই মুহূর্ত থেকেই কাশ্মীরবাসীর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার আরও সংকুচিত হতে থাকে। গত সত্তর বছর ধরে কাশ্মীরিদের কী দুর্দশার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তার এক ভয়াবহ প্রমাণ তুলে ধরেছে স্থানীয় একটি মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও সংস্থা। এই ৭ দশকে কাশ্মীরের ১,৬৫,৪০০ বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১,১০,৪৯৮ কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। ১,০৭,৮৮০ শিশু এতিম হয়েছে। ৯৬,১৪৮টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দিল্লি। ২২,৯৫০ নারী বিধবা হয়েছে। ১০,১২৫ জন গুম। ৭,২৭৪ জনকে জেল হেফাজতে হত্যা। ১১,২৫৬টি গণধর্ষণ।