ইকোনোমিক টাইমস: ব্যাপক দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ লুটপাট, সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে নেপালে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে সাধারণ জনতা। এতে করে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদরা। ভারতেও একইরকম পরিস্থিতি হতে পারে বলে সতর্কতা দিয়েছেন শিবসেনার এমপি সঞ্জয় রউত। তিনি এখনই রাজনীতিবিদদের সতর্ক হতে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া নরেন্দ্র মোদির সরকারও ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ করেন সঞ্চয়। তিনি বলেছেন দুর্নীতি, স্বৈরাচারী শাসন, স্বজনপ্রীতি বিরুদ্ধে নেপালে যে ‘আগুনের সূত্রপাত’ হয়েছে সেটি ভারতে হতে পারে। তবে ভারতে এখনো এমন কিছু হচ্ছে না কারণ ভারতীয়রা মহাত্মা গান্ধার অহিংসা নীতি মেনে চলে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ‘শুধুমাত্র মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শের’ কারণে বেঁচে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিবসেনার এ নেতা বলেন, “নেপালের এই স্ফুলিঙ্গ যদি ভারতে আসেৃ ভারত আজ পর্যন্ত টিকে আছে কেবল মহাত্মা গান্ধী এখানে জন্মেছিলেন বলেই। আজও মানুষ গান্ধীকে বিশ্বাস করে, সেই কারণেই এই মানুষগুলো টিকে আছে। মোদিজি, আপনি গান্ধীকে যতই গালাগালি করুন না কেন, আপনার সরকারও গান্ধীর আদর্শের কারণেই টিকে আছে।” নরেন্দ্র মোদির সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত অভিযোগ করে সঞ্জয় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেন, এর মানে কী? এর মানে হলো দেশে এখনো গরিব মানুষ এখনও আছে। নেপালেরও একই অবস্থা ছিল। ভারতের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। কারও ছেলে দুবাইয়ে, কারও ছেলে সিঙ্গাপুরে, কেউ আবার ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছে।” মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি ব্যর্থ দাবি করে এ রাজনীতিবিদ বলেন, “নেপাল একসময় আমাদের বন্ধু ছিল, নেপাল ভারতকে বড় ভাই মনে করত। নেপালের যখন সংকট ছিল, তখন বড় ভাই তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এটি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা।”

মোদির সফরের আগে মণিপুরে বিজেপিতে ভাঙন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসছেন মণিপুরে। দীর্ঘ ২৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলার পর রাজ্যের মাটিতে তার এটাই প্রথম সফর। কিন্তু সেই সফরের আগে বিজেপিতে দেখা দিল বড় ভাঙন। রাজ্যের প্রভাবশালী তিন নেতা শাসকদল ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দিলেন। ওয়াই সুরচন্দ্র সিং, এল রাধাকিশোর সিং ও উত্তমকুমার নিঙ্গথৌজাম—এই তিন জন গত মঙ্গলবার দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন। তাদের মধ্যে দুইজন সাবেক বিধায়ক।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিজেপি মণিপুরে ব্যর্থতার চূড়ান্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অক্ষম শাসকদল। তাই মানুষের ভরসা এখন কংগ্রেসের দিকে। গত দুই বছরে মণিপুরের মানুষ আগুন আর রক্ত দেখেছে। ঘরছাড়া লাখো মানুষ, স্থায়ী ভয়ের পরিবেশ, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা—সব মিলিয়ে জনজীবন ছারখার। এই সময়ে শাসকদলের ভেতরে ভাঙন নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। মানুষ ভাবছে, যারা ক্ষমতায় থেকেও ব্যর্থ, তাদের পাশে থেকে লাভ কী?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মণিপুরে বিজেপি এখন কোণঠাসা। মণিপুরের জনগণের ক্ষোভ এতটাই গভীর যে নেতাদেরও দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কংগ্রেস একে রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। তাদের ভাষায়, ‘এখন কেবল কংগ্রেসই রাজ্যকে বাঁচাতে পারে।’ মোদির সফর ঘিরে বিজেপি চেয়েছিল শক্তি প্রদর্শন করতে। কিন্তু নেতাদের এই ভাঙন উল্টো আঘাত হানল শাসক শিবিরে। প্রশ্ন উঠছে—প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের মানুষকে কী বার্তা দেবেন? দীর্ঘ রক্তক্ষয়ের পর তার আগমন কতটা আস্থা ফেরাবে? জনগণের চোখ এখন কংগ্রেসের দিকে। বিজেপির দুর্বলতা যে স্পষ্ট, এই দলত্যাগ তারই প্রমাণ। রাজ্যের অশান্ত আবহে মোদির সফরের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে এই প্রশ্নে তিনি কি মানুষের আস্থা ফেরাতে পারবেন, নাকি এই ভাঙন আরও গভীর সংকেত বয়ে আনবে?