বিবিসি : ভারতের মধ্যপ্রদেশে দান করা রক্ত থেকে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে থ্যালাসেমিয়ায় ভোগা পাঁচ শিশু। থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার অংশ হিসাবে তাদের শরীরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। কয়েকটি ব্লাড ব্যাংক তাদের জন্য রক্ত সরবরাহ করত। কিন্তু রক্তদাতাদের স্ক্রিনিংয়ে অবহেলার ফলে এই শিশুরা এইচআইভির সংস্পর্শে এসেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তদন্তে উঠে এসেছে, সাতনার সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রক্ত সঞ্চালনের সময় এই শিশুদের এইচআইভি-সংক্রমিত রক্ত দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনা শুধু চরম অবহেলার প্রশ্নই তোলে না, বরং রক্তের নিরাপত্তা, নজরদারি ও জবাবদিহির ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশাকেও তুলে ধরছে।

এনডিটিভি জানতে পেরেছে, বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের ওপর নির্ভরশীল ওই পাঁচ শিশুকে মোট ১৮৯ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছিল, যা সংগ্রহ করা হয় তিনটি ভিন্ন ব্লাড ব্যাংক থেকে। এর ফলে তারা ১৫০ জনেরও বেশি দাতার রক্তের সংস্পর্শে আসে।

দাতাদের রক্তের মাধ্যমেই শিশুদের শরীরে এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনাকে রক্তদাতাদের স্ক্রিনিং প্রোটোকলের একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা হিসাবে দেখা হচ্ছে।

এ ঘটনায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। একজন ব্লাড ব্যাংক ইন-চার্জ ও দুইজন ল্যাব টেকনিশিয়ানকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সাতনা জেলা হাসপাতালের প্রাক্তন সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. মনোজ শুক্লাকে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে প্রথমবার এই শিশুদের মধ্যে একজনের এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার ঘটনা সামনে আসে। এপ্রিলের মধ্যেই আরও একাধিক শিশুর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি হাসপাতাল প্রশাসন বা জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি, কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।

এ সময়ে কোনো ব্লাড ব্যাংক অডিট করা হয়নি, কোনো জনস্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়নি এবং নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।

তবে মধ্যপ্রদেশ সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্লা কিছুটা দায় এড়ানোর সুরে বলেছেন, সবসময় রক্ত সঞ্চালন একটি কেন্দ্রেই হয় না; পরিস্থিতি অনুযায়ী রোগীরা সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক, আত্মীয়স্বজন বা দাতা-সংযুক্ত ব্লাড ব্যাংকের মধ্যে যাতায়াত করে।

চিফ মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ অফিসার মনোজ শুক্লা অবশ্য স্বীকার করেছেন, প্রোগ্রাম অফিসারের স্তরে কিছু ঘাটতি ধরা পড়েছে।

তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে বিরোধীরা এই ঘটনাকে ‘অপরাধমূলক অবহেলা’ বলে অভিহিত করেছে।

কংগ্রেস নেতা ডা. বিক্রান্ত ভুরিয়া এনডিটিভিকে বলেন, ২০২৫ সালে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ কোনোভাবেই দুর্ঘটনা হতে পারে না। তার অভিযোগ, রক্ত পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে, পরীক্ষার নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং নজরদারি ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।