৭ মার্চ, আনাদোলু : ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান পরিস্থিতিকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই সংস্থাটির মতে, আন্তর্জাতিক আইনকে সর্বদা সম্মান করা উচিত এবং বেমারিক নাগরিকদেরকেও সুরক্ষা দেওয়া উচিত। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা।

বার্তা সংস্থাটি বলছে, জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বিশেষ করে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে আমাদের মানবিক সহকর্মীরা সতর্ক করছেন যে পরিস্থিতি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। অংশীদাররা আমাদের বলছেন, ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে তারা যা দেখছেন তা হলোÍ বাস্তুচ্যুতি থেকে শুরু করে ভেঙে পড়া বাড়িঘর এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পর্যন্ত দুর্দশা।” তিনি আরও বলেন, সর্বদা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করতে হবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কথাই জাতিসংঘ জোর দিয়ে বলে। গাজা উপত্যকা সম্পর্কে ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলছেÍ দেরি না করে সাহায্য প্রবাহ পুনরায় শুরু না হলে সেখানে “ইতোমধ্যেই বিদ্যমান বিপর্যয়কর” পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীর জুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সেখানে ইসরাইলী সেনাবাহিনী এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় কমপক্ষে ৯৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও প্রায় ৭ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। গত বছরের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দীর্ঘস্থায়ী দখলদারিত্বকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সমস্ত বসতি খালি করার আহ্বান জানায়।

ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেনÍ পাকিস্তানের কাশ্মীর, যেটা জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ তা ফিরিয়ে আনবেন। কে তাদের বাধা দিয়েছে? আমরা কী কখনও বলেছি যে তা ফিরিয়ে আনবেন না। আমরা বলছি, যদি আপনারা ওই অংশ ফিরিয়ে আনতে পারেন তাহলে তা ফিরিয়ে আনুন।”

এরই সঙ্গে কার্গিল যুদ্ধের সময়ে কেন ওই অংশ ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের এই মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া কেন হাজিপার সেক্টরকে পাকিস্তানের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হাজিপারের কথা ছেড়ে দিন, যখন কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল তখন কী পাকিস্তানের দখলে থাকা অংশ ফিরিয়ে আনা গিয়েছিল? সেটা তো পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার একটা সুযোগ ছিল... ওকে, (পারলে) এখন ফিরিয়ে আনুন।”

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মীরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে, তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

এছাড়া ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান - কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।

সেই থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন - এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।

অন্যদিকে জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করে ভারত। সেসময় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে এটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।