আনাদোলু : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ১০৬ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় চার শতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছে গেছে। এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২৬৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী আক্রমণে আরও ৩৬৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৬৪ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলী বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত এবং আরও ৭ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরাইলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরাইল।
এদিকে দক্ষিণ গাজায় দুটি ইসরাইলী সামরিক ইউনিটকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে তাদের ১৯ সৈন্যকে নিহত করার দাবি করেছে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড। গত বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেয় সশস্ত্র ব্রিগেডটি। হামাস জানিয়েছে যে পূর্ব রাফাহের আল-তান্নুর পাড়ায় ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ মসজিদের কাছে যোদ্ধারা সাত সৈন্যের একটি ইসরাইলী বাহিনীর উপর শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে হামলা চালায়। যাতে সবাই মারা গেছে।
ব্রিগেডগুলি এর আগে জানিয়েছিল, একই পাড়ায় আল-ফিদাই জংশনের কাছে একটি বাড়ির ভিতরে ধ্বংস অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তারা ১২ জন সৈন্যের একটি ইসরাইলী ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটকে দুটি অ্যান্টি-পার্সোনেল এবং অ্যান্টি-আর্মর শেল দিয়ে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। আর সেই হামলায় নিহত হয়েছেন ১২ জন ইসরাইলী। হামাস আরও জানিয়েছে, বাড়ির ভিতরে বিস্ফোরণে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মৃত ও আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরাইলী হেলিকপ্টার অবতরণ করতে দেখেছে তারা।
আল কাসসাম জানিয়েছে, পূর্ব রাফাহের আল-জেনিনা পাড়ায় ইসরাইলী সেনাদের সঙ্গে হামাসের যোদ্ধারা ‘তীব্র যুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। যদিও এ সব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইলী সেনাবাহিনী। গত সোমবার ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর এক আপডেট অনুসারে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে মোট ৮৫৪ জন ইসরাইলী সেনা নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৮ মার্চ গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে ছয়জনও রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে আহত ইসরাইলী সেনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫,৮৪৭, গাজার অভ্যন্তরে স্থল আক্রমণে ২,৬৪১ জন আহত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যানের মধ্যে গাজা, দক্ষিণ লেবানন এবং পশ্চিম তীরে সামরিক মৃত্যুর ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত। তবে তথ্য থাকা সত্ত্বেও, ইসরাইলী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায়শই তাদের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে ইসরাইলী সেনাবাহিনী গাজায় নৃশংস সামরিক আক্রমণ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রায় ৫২,৮০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।