দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট, রয়টার্স: নেপালের লেখক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাবেক আমলাসহ বিশিষ্টজনেরা দেশটির সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করেছেন, যাতে তাঁরা তরুণসমাজের ক্ষোভকে অবমূল্যায়ন না করে। বিশিষ্টজনেরা গত সোমবার নেপালে তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ–পরবর্তী রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর এই সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। বিশিষ্টজনের বলেছেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে যুবসমাজের মনে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অসন্তোষের বিস্ফোরণের ফলেই সোমবার এই বিক্ষোভ হয়েছে।

ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের সাবেক ডিন ডা. অরুণ সায়ামি বলেন, ‘সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই নেতারা ভাবেন, তাঁরা যা ইচ্ছা তা–ই করতে পারবেন। এখনকার তরুণেরা তাঁদের দাস নয়। রাজা জ্ঞানেন্দ্রের (২০০৮ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন) মতো আচরণ বন্ধ করুন।’ নেপালে গত সোমবারের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ১৯ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হন। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে দেশটির আইনসভা ভবনের সংরক্ষিত নিরাপত্তা জোনে ঢুকে পড়লে এ ঘটনা ঘটে।

নেপালের জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডা. অরুণা উপ্রেতি বলেন, ‘আজকের ঘটনা আমাকে রাজা জ্ঞানেন্দ্রের শাসনামলের শেষ দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি তখন নির্বিচার দমননীতি গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমান সরকারও তরুণদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে একই পথে হাঁটছে।’ নেপালে সোমবারের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ১৯ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হন। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে দেশটির আইনসভা ভবনের সংরক্ষিত নিরাপত্তা জোনে ঢুকে পড়লে এ ঘটনা ঘটে। অরুণা উপ্রেতি আরও বলেন, ১৯৮০–এর দশকে পঞ্চায়েত শাসনব্যবস্থার সময় জনপ্রিয় আন্দোলন দমন করার চেয়েও ভয়াবহ ছিল সোমবারের ঘটনা।

ডা. অরুণা বলেন, ‘বর্তমান সরকার, ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন-ইউএমএল তরুণদের বিরুদ্ধে অহংকার দেখিয়েছে এবং অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। কিন্তু এই দমন-নিপীড়ন অন্যায়, ব্যাপক দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ কমাতে পারবে না।’ লেখক খগেন্দ্র সাংগ্রৌলা বলেন, সোমবারের ঘটনা ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন করেছে। এ ছাড়া বিরোধী দল সিপিএন ও জাতীয় স্বতন্ত্র পার্টির (আরএসপি) বিরুদ্ধে তরুণদের উসকে দেওয়ার অভিযোগও করছেন তিনি। খগেন্দ্র বলেন, ‘শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল নন, আরএসপি ও কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহও ক্ষুব্ধ তরুণদের আন্দোলনে উৎসাহ জুগিয়েছেন। এমনকি দুর্গা প্রসাইন, জাতীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি ও অন্যরা এ সুযোগে আগুনে ঘি ঢেলেছেন। গত বৃহস্পতিবার নেপালের সরকার ফেসবুকসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করেনি। মজার ব্যাপার হলো পুষ্পকমল দহল নিজে ক্ষমতায় থাকাকালে টিকটক বন্ধ করেছিলেন। অথচ এখন অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করায় বর্তমান সরকারের সমালোচনা করছেন। বেশির ভাগ মানুষ কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছেন, জেন-জিদের এই বিক্ষোভ এতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং এত প্রাণহানি ঘটবে বলে আশঙ্কা করেননি তাঁরা। তাঁদের মতে, আজকের যুবসমাজ রাজনৈতিক দলের অন্ধ আনুগত্য করে না। তাঁদের অভিযোগ, সরকার সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে।

সাংগ্রৌলা বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলেছেন। কিন্তু বর্তমান সরকার বিরোধী মত দমন করার জন্য এ রায়কে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা যত বেশি দমন পীড়ন চালাবে, বিরোধী কণ্ঠস্বর তত বেশি শক্তিশালী হবে এবং বিক্ষোভ থামবে না।’ গত বৃহস্পতিবার নেপাল সরকার ফেসবুকসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করেনি। উড়োজাহাজ প্রশিক্ষক বিজয়া লামা বলেন, ‘আজকের যুবসমাজ আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান, শিক্ষিত ও আপডেটেড। তারা দেশের ভবিষ্যৎ। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট না করে। একই সঙ্গে সরকারকেও বলব, তরুণদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করা উচিত নয়।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় পতাকা হাতে নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সমবেত হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সাবেক সচিব কিশোর থাপা বলেন, শুধু দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত থামানো যাবে না। কিশোর থাপা বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না হলে এখন দেশে টিকে থাকাই কঠিন। শুধু তরুণদের মধ্যে নয়, প্রবীণ ও পেশাজীবীদের মধ্যেও এখন সরকারবিরোধী মনোভাব ফুটে উঠছে। সরকারের উচিত জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করা।’