রয়টার্স: সৌদি আরব কয়েক বছর ধরে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণ করতে যে উচ্চ বেতন-প্রণোদনা (স্যালারি প্রিমিয়াম) দিত, তা এখন কমাতে শুরু করেছে। ব্যয় সংকোচন এবং অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক নিয়োগ সংস্থা। তেলনির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন, রিয়েল এস্টেট, আর্থিক সেবা ও খনি খাতে অর্থনীতি সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে সৌদির ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মযজ্ঞ চলছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বহু–বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে বিদেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগ বাড়ানো হয়েছিল।কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও ব্যয়চাপে এখন সেই প্রবণতায় পরিবর্তন এসেছে। খাতসংশ্লিষ্ট দুই নিয়োগ দাতাকে জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগেও বিদেশি কর্মীরা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত বেতন, অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তি সুবিধা আলোচনা করতে পারতেন। এখন সে সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। রিক্রুটার বোয়ডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যাগদি আল জেইনের ভাষায়, ‘একদিকে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ব্যয় কমাচ্ছে, অন্যদিকে অঞ্চলটিতে আসতে আগ্রহী প্রার্থীও বাড়ছে।

ফলে নিয়োগ প্যাকেজ নিয়ে নতুন করে ভাবছে সবাই।’ ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎনগর নিয়োম বা ২০২৯ এশিয়ান উইন্টার গেমসের আয়োজক পর্বত ‘রিসোর্ট ত্রোজেনা’ এসব প্রকল্পে বিপুল বিদেশি নিয়োগ হয়েছিল। দুবাইভিত্তিক টাস্কান মিডল ইস্টের প্রধান নির্বাহী হাসান বাবাত জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যেসব প্রকল্প ব্যবস্থাপক বছরে ৬০ হাজার ডলার পেতেন, তাদের জন্য সৌদিতে ১ লাখ ডলারের অফার সাধারণ বিষয় ছিল। তবে এখন মেগাপ্রকল্পগুলোয় অগ্রগতি ধীর হওয়ায়, ২০২৫ সালে প্রকল্প–চুক্তির পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে কামকো ইনভেস্ট।

তেলের দামের নিম্নমুখী আচরণ সৌদির রাজস্বঘাটতি বাড়িয়েছে। বাজার ধরে রাখতে উৎপাদন কমানোয় তেল আয়ে চাপ আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে বাজেট ভারসাম্য রাখতে সৌদির ১০০ ডলারের কাছাকাছি তেলের দাম দরকার। এই পরিস্থিতিতে বেতন প্রণোদনা এখন মূলত এআই, ডিজিটাল প্রযুক্তি, লজিস্টিকস ও খনি খাতের ‘হট জব’-এ সীমিত করে দিচ্ছে সৌদি কম্পানিগুলো। সৌদি আরবের অর্থনীতি এ বছর প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই যারা বাইরে চাকরি খুঁজছেন, তাদের জন্য দেশটি এখনো অনেক আকর্ষণীয়। সৌদি সরকার শ্রমবাজারে সংস্কার এনেছে এবং প্রাইভেট সেক্টরে দেশিরা বেশি অংশ নেবে তা নিশ্চিত করছে। ফলে চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়েছে। সৌদি নাগরিকদের বেকারত্ব ইতিহাসের ন্যূনতম এবং ২০১৬ থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টরে সৌদিদের সংখ্যা ৩১ শতাংশ বেড়েছে। দুবাইভিত্তিক ম্যাচ ট্যালেন্ট-এর সিইও লুইজ ক্নুটসনের মতে, সৌদিতে সেরা প্রতিভা আনার জন্য কোম্পানিগুলোকে এমন বেতন-প্যাকেজ দিতে হবে যা জীবনযাত্রার খরচ, পরিবারের ভারসাম্য এবং প্রকল্পের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।