রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান : জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-তে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অর্থসহায়তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ানোর মূল চালিকা শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সরাসরি কোনো কিছু বলা হয়নি। তা ছাড়া চুক্তিটি বাধ্যতামূলক নয়; বরং স্বেচ্ছাভিত্তিক। অর্থাৎ সম্মত কোনো দেশ চাইলে চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে পারবে। কপ৩০-এর নির্ধারিত সময়ে চুক্তি করা সম্ভব না হওয়ায় আলোচনা বর্ধিত সময়ে গড়ায়। টানা ১২ ঘণ্টার নিবিড় দর-কষাকষির পর গতকাল শনিবার সকালে চুক্তির ঘোষণা আসে। চুক্তিতে ১৯৪টি দেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সম্মত হয়েছে। এবারের সম্মেলনের আয়োজক দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরের স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। ব্রাজিলের আশা, চুক্তি হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভবিষ্যতে বৈশ্বিক পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এবারের সম্মেলনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি না পাঠানোয় ব্রাজিলের এই আশাবাদ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এবারের চুক্তি অনেককে হতাশ করেছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের জলবায়ু সেক্রেটারিয়েটের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সেক্রেটারি সাইমন স্টিয়েল বলেন, ‘দায় স্বীকারে অস্বীকৃতি এবং নানা বিষয়ে বিভক্ত একটি বছরে অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিরা শেষ পর্যন্ত একমত হতে পেরেছেন, এটাই প্রশংসনীয়।’ সাইমন স্টিয়েলের ভাষায়, ‘আমি বলছি না আমরা জলবায়ু লড়াইয়ে জিতছি। তবে আমরা এখনো নিঃসন্দেহে সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছি। আমরা প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছি।’

১০ নভেম্বর থেকে আমাজন নদীর মুখের কাছের বেলেম শহরে শুরু হওয়া কপ৩০-এর মূল লক্ষ্য ছিল গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ রোধ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের বিদ্যমান কাঠামোকে শক্তিশালী করা। প্রতিটি কপের শেষে সর্বসম্মতিক্রমে একটি আশাজাগানিয়া ঘোষণা আসবে, এমনটি আশা করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংকট থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো। কিন্তু গত কয়েক বছরের মতো এবারও সম্মেলনের শেষ দিন গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চুক্তির বিষয়ে সম্মত হওয়া যায়নি। তখন আলোচনা বর্ধিত সময়ে গড়ায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভুক্তভোগী ৮০টির বেশি দেশ ও অঞ্চল এবারে চুক্তিতে জ্বালানি তেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে স্পষ্ট রূপরেখা চেয়েছিল। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই দাবির পক্ষে ছিল। কিন্তু সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো শীর্ষ জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও রপ্তানিকারক দেশগুলো সম্মেলনের শুরু থেকে এই দাবির বিরোধিতা করে আসছিল। শেষ মুহূর্তে এটা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়।

এবার বর্ধিত সময়ে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ধীরে ধীরে কমানোর একটি রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন নিধন বন্ধ করা নিয়ে রূপরেখায় কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এটি আয়োজক দেশ ব্রাজিল ও প্রকৃতি রক্ষায় নিবেদিত সংগঠনগুলোকে হতাশ করেছে। কারণ, বন নিধন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই এবারের কপ সম্মেলন বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বনাঞ্চল (রেইনফরেস্ট) আমাজন নদীর মুখের বেলেম শহরে করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভবিষ্যতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা নিয়ে আরও গভীর মতভেদ তৈরি হতে পারে, যা এবারের সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে।