১৯ মার্চ, আল জাজিরা : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি (জেএফকে) হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত হাজার হাজার পৃষ্ঠার সরকারি নথি প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার মার্কিন ন্যাশনাল আর্কাইভ এসব নথি প্রকাশ করে। সদ্য প্রকাশিত এসব গোপন নথি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইতিহাসবিদদের পাশাপাশি ইন্টারনেটে বহু মানুষকে নতুন করে কৌতুহলী করে তুলেছে।
গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেয়ার পর জানুয়ারিতেই জেএফকে হত্যাকাণ্ডের অবশিষ্ট সব রেকর্ড প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।
অবশ্য শুধুমাত্র কেনেডিই নয়, কেনেডির ভাই সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ কেনেডি এবং নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যার সাথে সম্পর্কিত অবশিষ্ট নথিগুলোও অসম্পাদিতভাবে প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। মূলত ট্রাম্পের সেই আদেশের পরই কেনেডি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভ জানিয়েছে, “শ্রেণীবদ্ধকরণের জন্য পূর্বে আটকে রাখা সমস্ত রেকর্ড” প্রকাশ করা হয়েছে এবং অনলাইনে বা ব্যক্তিগতভাবে এটা পাওয়া যাবে।
আল জাজিরা বলছে, আর্কাইভ দুটি প্রাথমিক ধাপে তাদের ওয়েবসাইটে প্রায় ৬৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি আপলোড করেছে। এছাড়া পরবর্তীতে আরও ফাইল ডিজিটালাইজড হওয়ার সাথে সাথে সেগুলোও অনলাইনে পোস্ট করা হবে। তুলসি গ্যাবার্ডের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, প্রকাশনাটিতে পূর্বে গোপন রেকর্ডের প্রায় ৮০ হাজার পৃষ্ঠা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত লাখ লাখ পৃষ্ঠার রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভসে রয়েছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অনুরোধে হাজার হাজার নথি আটকে রাখা হয়েছিল।
৪৬ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত করেছিল ওয়ারেন কমিশন। এই কমিশন তখন জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট কেনেডির ওপর সাবেক মেরিন শার্পশুটার লি হার্ভে অসওয়াল্ড গুলি চালিয়েছিল এবং তিনি একাই এই কাজে জড়িত ছিলেন। কিন্তু এই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তটি টেক্সাসের ডালাসে কেনেডি হত্যার পেছনে আরও ভয়াবহ কোনও ষড়যন্ত্র থাকার জল্পনাকে থামাতে খুব একটা সাহায্য করেনি এবং সরকারি নথিগুলোর ধীরগতিতে প্রকাশ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাসে গুলিতে নিহত হন জনএফ কেনেডি। দশকের পর দশক তার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে এসেছে। কিন্তু তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। জন এফ কেনেডি মারা যাওয়ার ৫ বছর পর ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন তার ভাই ও তৎকালীন মার্কিন সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ওই বছরই টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেমফিসে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারান মার্কিন নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম মুখ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।
ওই তিন নেতার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট এতদিন জনসমক্ষে আসেনি। দশকের পর দশক জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় ওই হত্যাকাণ্ডের ব্যাখ্যা সম্পর্কে নানা সন্দেহও প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে গ্যালাপের এক সমীক্ষায় ৬৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিক বলেছিলেন, লি হার্ভে অসওয়াল্ড একাই জন এফ কেনেডিকে হত্যা করেছিলেন বলে ওয়ারেন কমিশন যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল তা তারা বিশ্বাস করেন না।
এতদিন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই দেশের তিন জনপ্রিয় নেতার গুপ্তহত্যার নথি প্রকাশ্যে আনার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখাননি। তবে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে বসেই কেনেডি ভ্রাতৃদ্বয় এবং মাটিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড নিয়ে গোপন রিপোর্ট প্রকাশ্যে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার হাজার হাজার পৃষ্ঠার এসব গোপন নথি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হলো।