গাজায় বন্দি থাকা জীবিত ২০ পণবন্দীর সবাইকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। দ্বিতীয় ধাপে ১৩ ইসরাইলি পণবন্দীকে রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ)। এর আগে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় প্রথম ধাপে ৭ পণবন্দীকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
মুক্তি পাওয়া ৭ পণবন্দী এরই মধ্যে দক্ষিণ ইসরাইলের প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। বাকী ১৩ পণবন্দী ইসরাইলের পথে আছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এই পণবন্দীদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে অপহরণ করেছিল হামাস। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে যমজ ভাই জিভ এবং গালি বারম্যানও আছেন। সকালে তাদেরকে গাজায় একসঙ্গে দেখা গেছে।
হামাসের সঙ্গে পণবন্দী বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে, ওফার কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাসের দৃশ্য দেখা গেছে, যাদের ইসরাইল মুক্তি দিচ্ছে।
পণবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ১,৭০০ জনেরও বেশি আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে ইসরাইলে অবস্থান করছেন এবং তিনি অল্পক্ষণের মধ্যেই ইসরাইলি সংসদে ভাষণ দেবেন — যা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এক শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে এরপর তিনি মিসরে যাবেন।
ইসরাইলি পণবন্দী ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের নাম প্রকাশ করেছে হামাস
এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স : গাজায় আটক ২০ জন জীবিত পণবন্দী এবং ইসরাইলে বন্দী ১ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড। আজ সোমবার বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রাম চ্যানেলে নামগুলো প্রকাশ করে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, আজ ইসরাইলের সব পণবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে হামাসের। বিনিময়ে ইসরাইলে আটক দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় থাকা ৪৮ জন পণবন্দীর মধ্যে ২০ জন বেঁচে আছেন।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণবন্দী ব্যক্তিদের মুক্তির অপেক্ষায় তাঁদের পরিবার আজ সকালে রেইম সামরিক ঘাঁটিতে এবং সমর্থকেরা তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ সমবেত হয়েছেন। এ সময় কারও হাতে ছিল ইসরাইলি পতাকা, আবার কারও কারও হাতে পণবন্দী ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের পরিবার গাজার নাসের হাসপাতাল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে নিজ নিজ বাড়িতে তাঁদের মুক্তির অপেক্ষায় আছেন।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) বন্দিবিনিময়ের পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করবে। ইসরাইলি পণবন্দীদের নেওয়ার জন্য তাদের বাসগুলো মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে আইসিআরসির কয়েকটি যানবাহন ইসরাইলের ওফের এলাকায় একটি কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছে।
ইসরাইলের পার্লামেন্টে হট্টগোলে ট্রাম্পের ভাষণ বাধাগ্রস্ত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেট ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর ভাষণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, আজ সোমবার ট্রাম্প ভাষণ দেওয়ার সময় ইসরাইলের পার্লামেন্টে কিছুটা হট্টগোল দেখা গিয়েছিল। এতে ট্রাম্প তার ভাষণ থামাতে বাধ্য হয়েছেন।
একপর্যায়ে নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত এক ব্যক্তির কাছে এগিয়ে যায় এবং তাঁকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পার্লামেন্টে ভাষণ শুরুর আগে বলেন, ‘কাজটা খুব দক্ষতার সঙ্গে হয়েছে।’
নেসেটে ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আজ একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ‘ঐতিহাসিক ভোর’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানান। তিনি তাঁকে ‘অসাধারণ সাহসী একজন মানুষ’ বলে অভিহিত করেন।
এ সময় পার্লামেন্টে উপস্থিত সদস্যদের অনেকে নেতানিয়াহুর ডাকনাম ‘বিবি’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে আলোচনায় সহায়তাকারী আরব দেশগুলোকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তাদের একসঙ্গে কাজ করাটা ‘অবিশ্বাস্য এত বিজয়’।
ট্রাম্প আরও বলেন, এখন ইসরাইলের ‘স্বর্ণযুগ আসবে’ এবং এটি সমগ্র অঞ্চলের জন্যও ‘স্বর্ণযুগ’ হবে।
ট্রাম্প ছাড়া কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য নয়: ইসরাইলি পার্লামেন্টের স্পিকার
সিএনএন : ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা গতকাল সোমবার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছাড়া আর কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যোগ্য নয়। ইসরাইল আগামী বছর ট্রাম্পকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পার্লামেন্ট অধিবেশনে ওহানা ইসরাইলকে সহায়তার জন্য ট্রাম্পের প্রতি বারবার ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে চলতি বছরের শুরুতে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধে সহায়তা এবং ইসরাইল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপনে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
ওহানা বলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, হাজার বছর ধরে ইহুদি জনগণ আপনাকে স্মরণ করবে। আমরা এমন একটি জাতি, যারা মনে রাখে। এই পৃথিবীতে এমন আর কোনো মানুষ নেই, যিনি আপনার চেয়ে বেশি শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন।’
মিসরে গাজা শান্তি সম্মেলনে অংশ নেবেন না নেতানিয়াহু
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ সোমবার মিসরের শারম আল-শেখে ‘গাজা শান্তি সম্মেলনে’ অংশ নেবেন না। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আজ মিসরে আয়োজিত একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের আমন্ত্রণের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, ছুটির শুরুর আগ মুহূর্তের কারণে তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এর আগে আজ সকালে হোয়াইট হাউস এবং মিসরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছিল, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
গাজাবাসীর জন্য ২ কোটি পাউন্ড সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
বিবিসি, রয়টার্স : যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষের জন্য দুই কোটি পাউন্ড মানবিক সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য। এ অর্থ গাজাবাসীর জন্য সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবায় ব্যয় করা হবে।
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে গতকাল সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে আলোচনায় বসছেন বিশ্বনেতারা। আলোচনায় যোগ দিতে মিসরে গেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। সেখানেই সহায়তার বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
এ অর্থায়ন চলতি বছর ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের দেওয়া ১১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডের বৃহত্তর সহায়তা প্রতিশ্রুতির অংশ।
‘শান্তি পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাজ্য পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় সমর্থন করবে। উভয় পক্ষের মানুষ যাতে নিরাপদে তাঁদের জীবন পুনর্র্নিমাণ করতে পারে’—কিয়ার স্টারমার এমনটাই বলতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শারম আল শেখে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ ২০টির বেশি দেশের শীর্ষ নেতাদের এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও অংশ নিতে পারেন সম্মেলনে।
রামাল্লায় পৌঁছেছে ফিলিস্তিনি বন্দীদের বহনকারী বাস
দখলদার ইসরাইলের কাছে বন্দী থাকা ফিলিস্তিনিদের বহনকারী কয়েকটি বাস রামাল্লায় পৌঁছেছে। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সরাসরি সম্প্রচারে নিশ্চিত করেছে, ইসরাইলের মুক্তি দেওয়া কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীকে বহনকারী বাসগুলো অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় পৌঁছেছে।
এর আগে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বহনকারী বাসগুলো দক্ষিণ ইসরাইলের নেগেভ কারাগার থেকে গাজায়ও যায়। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের স্বাগত জানাতে পরিবারগুলো জড়ো হয়েছে গাজার রামাল্লায়।
তবে তাদের মধ্যে আগের মতো উৎসবের আমেজের বদলে এবার দেখা যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। অপেক্ষমান পরিবারগুলোর অভিযোগ, এই চুক্তি এত দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকা রাতভর একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছে।
দুই বছর ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজায় বন্দি থাকা সবশেষ ২০ ইসরাইলি পণবন্দীকে সোমবার মুক্তি দিয়েছে হামাস।
ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জানায়, পণবন্দীদের দুই ধাপে মুক্তি দেওয়া হয়— প্রথমে ৭ জন এবং পরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে আরও ১৩ জনকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের হাতে থাকা জীবিত সব পণবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং বিনিময়ে ইসরাইলও দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। এই মুক্তি প্রক্রিয়া চলাকালেই ট্রাম্প সোমবার সকালে এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ইসরাইলে অবতরণ করেন।
এরদোগানের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় তুরস্কের ভূমিকার ব্যাপক প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে বলেছেন ‘দারুণ’ এবং জোর দিয়ে বলেছেন, আঙ্কারা আঞ্চলিক প্রভাববলয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রোববার মধ্যপ্রাচ্যের পথে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তুরস্কও অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান দারুণ কাজ করেছেন। তিনি সত্যিই অনেক সহায়তা করেছেন, কারণ তিনি অত্যন্ত সম্মানিত একজন নেতা। তার দেশ শক্তিশালী—সেনাবাহিনীও অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি সত্যিই অনেক অবদান রেখেছেন।
তিনি আরও জানান, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কাতারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে তিনি বর্ণনা করেন ‘অসাধারণ মানুষ’ হিসেবে।
ট্রাম্প বলেন, তার দেশ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে—সংযুক্ত আরব আমিরাত বা সৌদি আরব থেকে যেখানে যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে, কাতার সেখানে সরাসরি মাঝখানে। কাতারের কৃতিত্ব দেওয়া শুরু করা উচিত।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানও ভূমিকা রেখেছে।
এই মন্তব্যের পর ট্রাম্প ইসরাইলের উদ্দেশে রওনা হন।
এরপর তিনি যাবেন মিশরের শারম আল শেখে, যেখানে সোমবার শুরু হবে ‘শারম আল শেখ শান্তি সম্মেলন’।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত এ সম্মেলনের লক্ষ্য, গাজা উপত্যকার যুদ্ধের অবসান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নতুন যুগের সূচনা।
তুরস্কের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে সিসি ও ট্রাম্পের আমন্ত্রণে এই শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আনাদোলু
ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে ইসরাইল, আছে অনিশ্চয়তা
রয়টার্স : এবার ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসরাইল। গতকাল সোমবার ইসরাইলের কারাগারে থাকা কিছু ফিলিস্তিনিকে নিয়ে একটি বাস ইতোমধ্যে গাজায় পৌঁছেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের বহনকারী আরও কিছু বাস গাজার দিকে যাত্রা করেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
তবে এখন পর্যন্ত কতজন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন, তা জানা যায়নি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে গাজা থেকে ইসরাইলি পণবন্দীদের মুক্তি দিতে শুরু করে হামাস। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জীবিত সব পণবন্দীকে ইতোমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
মুক্তি পাওয়া বন্দিদের স্বাগত জানাতে পরিবারগুলো জড়ো হয়েছে গাজার রামাল্লায়। তবে তাদের মধ্যে আগের মতো উৎসবের আমেজের বদলে এবার দেখা যাচ্ছে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা। কারণ ইসরাইল স্পষ্ট করেছে যে, তারা আগের পণবন্দী বিনিময় চুক্তিগুলোর সময়কার মতো উল্লাসপূর্ণ দৃশ্য এড়াতে চায়। এর আগে হামাসের পতাকা নাড়িয়ে বন্দিদের স্বাগত জানিয়েছিল বিপুল সংখ্যাক ফিলিস্তিনি।
রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে বেইতুনিয়া সীমান্তপথ সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল।
এর বদলে পরিবারগুলোকে রামাল্লার কেন্দ্রস্থলের একটি স্বাগত হলে একত্র করা হয়েছে। অনেকে জানিয়েছেন, তাদের বলা হয়েছে যেন তারা পতাকা না নাড়ান, মিষ্টি বিতরণ না করেন, এমনকি অতিথিদের জন্য চেয়ারও না রাখেন।
এখনকার পরিবেশটি আর উৎসবের নয়, বরং বিভ্রান্তিতে ভরা। পরিবারগুলোর অভিযোগ, এই চুক্তি এত দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকা রাতভর একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছে।
সকালে অপেক্ষমাণ অনেকেই জেনেছেন, তাদের আত্মীয়দের কেউ কেউ নিজ দেশে ফিরতে পারবেন না। কারণ তাদের অনেককেই বহিষ্কার করা হবে।
গাজা পরিদর্শন করতে চান ট্রাম্প
রয়টার্স, বিবিসি : ইসরাইলে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার ট্রাম্পের সরকারি উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান তেল আবিবের উপকণ্ঠে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। তবে বিমানবন্দরে নামার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি গাজা পরিদর্শন করতে চাই।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, তার স্ত্রী সারা, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং তার স্ত্রী ও ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
এর আগে, সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি গাজা পরিদর্শন করতে চাইবেন কি না?
সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানান, তিনি এটি করতে পারলে ‘গর্বিত’ হবেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজা সফর করতে চান। অন্তত একবার নিজের পা সেখানে রাখতে চান। যদিও গাজা সম্পর্কে তিনি এতটাই জানেন যে সেখানে না গিয়েও জায়গাটিকে ভালোভাবে চেনেন বলে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা বা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ধীরে ও ধৈর্যের সঙ্গে এগোতে হবে।
তিনি মনে করেন, আগামী কয়েক দশকে (অর্থাৎ দীর্ঘ সময়ে) এখানে (গাজা) বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন বা ‘অলৌকিক’ অগ্রগতি ঘটবে, তবে সেটা সময়সাপেক্ষ।
তবে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, যদি খুব তাড়াহুড়ো করে বা দ্রুত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা উল্টো ফল দিতে পারে। তাই ‘সঠিক গতি’ বা পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেবেন এবং পণবন্দীদের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ট্রাম্প। এরপর গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে মিসরের অবকাযাপনকেন্দ্র শারম এল-শেখের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। ওই সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ প্রায় ২০ বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন।