এশিয়া
গাজায় বন্দী মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হামাস আলোচনা পণ্ড
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি ও যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হামাসের সঙ্গে সরাসরি এই আলোচনা শুরু করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
Printed Edition

১০ মার্চ, বার্তাসংস্থা আনাদোলু, আল-জাজিরা : সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি ও যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হামাসের সঙ্গে সরাসরি এই আলোচনা শুরু করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে ইসরাইলী সংবাদমাধ্যমের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও হামাসের মধ্যকার এই আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে কোনও পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজায় ইসরাইলী বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন এবং ফিলিস্তিনী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে বলে রোববার ইসরাইলী গণমাধ্যম দাবি করেছে।
ইসরাইলী চ্যানেল ১২ ইসরাইলী একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হামাসের হাতে বন্দী অবস্থায় থাকা আমেরিকান নাগরিকত্বধারী ইসরাইলী বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা পণ্ড হয়ে গেছে। তবে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত কোনও বিবরণ দেওয়া হয়নি। ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যাডাম বোহলার এবং হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়ার মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতির খবর প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে হামাস বা ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এই দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস গত বুধবার জানায়, আমেরিকান নাগরিকত্বধারী ইসরাইলী বন্দিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য হামাসের সাথে সরাসরি আলোচনা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
এদিকে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য ইসরাইল সোমবার কাতারে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। ইসরাইলী চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর সরকার মধ্যস্থতাকারী কাতার এবং মিসরের অনুরোধে আলোচনায় অংশ নিতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া এই আলোচনায় আমেরিকার সমর্থনও রয়েছে। অন্যদিকে হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের এই অঞ্চলটি সফর করার কথা রয়েছে বলে ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে। ইসরাইলের অনুমান, গাজায় এখনও ৫৯ জন বন্দি আটক রয়েছেন যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২২ জন জীবিত। গাজা যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে ইসরাইলকে গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে তার বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে এবং যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলী বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে ৪৮ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া এই আগ্রাসনে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এছাড়া ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় ইসরাইলের হামলা নিহত ৫ ফিলিস্তিনী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু ফিলিস্তিনী। যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরাইল প্রায় প্রতিদিনই গাজায় হামলা চালাচ্ছে এবং এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। এদিকে সর্বশেষ প্রাণহানির ঘটনায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪৬০ জনে পৌঁছেছে। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও রোববার ইসরাইলী হামলায় আরও পাঁচ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ হাজার ৪৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলী আক্রমণে আরও ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে।নেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলী বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।
জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।