ইন্টারনেট : সরাসরি ক্ষমতা দখল না করেও পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির দেশটির প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।

পাকিস্তানের সংবিধানে বিতর্কিত ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে এই নতুন পদটি তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে মুনির এখন পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী; এই তিনটি বাহিনীরই প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এই সংশোধনীগুলি গত পহেলা নভেম্বর সিনেটে পাশ হয় এবং এর মাধ্যমে দেশের তিন বাহিনীর মধ্যে জ্যেষ্ঠতম পদ ‘চেয়ারম্যান অফ দ্য জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটি’ বিলুপ্ত করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৯৭৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এই পদটি তৈরি করেছিলেন। বর্তমান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার অবসরের সাথে সাথেই দেশটির প্রতিরক্ষা কাঠামোর এই দশকের পুরনো পদটির সমাপ্তি ঘটল।

২৭তম সংশোধনীর ফলে সামরিক বাহিনীর দিকে ক্ষমতার পাল্লা আরও বেশি ঝুঁকে পড়ল। নতুন নিয়মে এখন সেনাপ্রধানকে বাকি দুই বাহিনীর প্রধানের ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। তিনিই দেশের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থার একক দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া, তিন বাহিনীর সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ এখন থেকে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার বদলে সরাসরি চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সেসের হাতে ন্যস্ত হয়েছে।

এই পরিবর্তনের ফলে অসিম মুনিরের মেয়াদের ঘড়িও পুনরায় চালু হয়েছে। সংশোধনীগুলির মাধ্যমে তার মেয়াদ অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। মূলত গত বছর একটি সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক প্রধানদের তিন বছরের মেয়াদ পাঁচ বছর করায় তার নিয়মিত অবসর ২০২৭ সালের ২৭শে নভেম্বর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন নতুন পদে তিনি ২০৩০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবেন।

এই পরিবর্তনগুলো মুনিরকে দেশের প্রেসিডেন্টের সমতুল্য আইনি সুরক্ষা দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের মতোই এই ফিল্ড মার্শাল আজীবন যেকোনো আইনি মামলা থেকে অব্যাহতি লাভ করবেন। বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানদের জন্যও এই সুরক্ষা বাড়ানো হয়েছে।

এই সংশোধনীগুলো সামরিক বাহিনীর ওপর সরকারের নজরদারিও কমেছে। সিডিএফের কাছে এখন ‘ভাইস চিফ অফ আর্মি স্টাফ’ পদে নিয়োগের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে, যা পরে ফেডারেল সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হবে। আগে এই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে অসামরিক সরকারের হাতে ছিল।

এছাড়াও, ইসলামাবাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার তত্ত্বাবধানকারী ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড’-এর প্রধান কে হবেন, তা নির্ধারণে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সংশোধনী অনুসারে, সিডিএফ-এর পরামর্শে নির্বাহী বিভাগ থেকে একজন সেনা কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ করা হবে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নঈম খালিদ লোধির মতে, ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনির এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। তিনি মনে করেন, রাজনীতিবিদরাই তাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দায়ী। তাদের স্বল্পমেয়াদী স্বার্থের জন্য তারা পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

লেখক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সুজা নওয়াজ এই সংশোধনী ভোটকে একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। তার মতে, রাজনীতিবিদরা তাদের বীমা পলিসি নবায়ন করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, মুনিরের পাঁচ বছরের মেয়াদ তাদের মেয়াদের চেয়ে বেশি দীর্ঘ হবে এবং নির্বাচনের সময় তারা তার সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

নওয়াজ মনে করেন, মুনিরের হাতে এখন সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের মতো সম্ভবত ততটাই ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, মোশাররফের মতো তারও একজন অনুগত প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর কাঠামো পুনর্নির্মাণের ক্ষমতা রয়েছে।