আল-জাজিরা : গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ভিড়ে চাপা পড়ে ২১ জন নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরাইল পরিচালিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণকেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। জিএইচএফ জানিয়েছে, খান ইউনিসের কাছের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ১৯ জন চাপা পড়ে আর একজন ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সংস্থাটি দাবি করেছে, সেখানে হামাস বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, জিএইচএস তাদের অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২১টি লাশ পেয়েছে। যারা কাদানে গ্যাসে দমবন্ধ ও চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ত্রাণকেন্দ্রের সরু পথের গেইট বন্ধ করে সেখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জিএইচএসের নিরাপত্তা রক্ষীরা। এরপর আটকে পড়া এসব মানুষের মধ্যে কাঁদানে গ্যাস ও সরাসরি গুলি ছোড়ে তারা।
সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, নাসের হাসপাতালে একটি মালবাহী গাড়িতে করে ছয় বালকের লাশ আনা হয়েছে। তারা ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের বেড়ার সঙ্গে ছিল। অন্য মানুষের চাপায় পড়ে এই বালকেরা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তারা হলো শিশু। ত্রাণের জন্য মারা গেলো, তাদের দোষ কী? ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে কি হয়েছে। বিদেশিরা (ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের) এখানে সেখানে বেড়া তৈরি করেছে। এই বালকেরা সামনে গিয়েছিল। এরপর মানুষ এসে তাদের চাপা দেয়।
ইসরাইলি হামলায় ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত : ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও অন্তত ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত দুজন ত্রাণ প্রত্যাশী ছিলেন। এদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করেছে যে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। গত মঙ্গলবার উত্তর গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছে স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রগুলো। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পরিচালিত দক্ষিণ গাজার রাফাহর উত্তরে একটি বিতর্কিত “গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন” (জিএইচএফ) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে ইসরাইলি হামলায় অন্তত দুই নারী নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে গাজায় অন্তত ৮৭৫ জন মানুষ নিহত হয়েছে। এর আগে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তারা ১৫ জুলাই ভোর থেকে অন্তত ১৮ জন শহীদের মরদেহ এবং বহু আহত ব্যক্তিকে সরিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই উত্তর গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার শিকার। ইসরাইলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজার ১৬টি এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জন্য জোরপূর্বক স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে জাবালিয়া শহর অন্যতম, একটি বিধ্বস্ত নগরী, যেখানে মানুষ আতঙ্ক ও ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষজন গাড়ি ও গাধা ব্যবহার করে এলাকা ত্যাগ করছে, সবাই অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ছুটছে; তারা জানে না কোথায় যাবে। তারা পরিবহনের সাথেও লড়াই করছে, কারণ এখানে এবং আশেপাশে জ্বালানির অভাব রয়েছে। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। এখানে বসবাসরত সবাই এক চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গাজা শহরের এক শরণার্থী তাঁবুতে ইসরাইলি এক হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স সংস্থা।