রয়টার্স, বিবিসি : ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। গতকাল সোমবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় সকল ইরানির প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। তিনি সকল ইরানিকে মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ়তা দেখাতে এবং এমন ‘গণহত্যামূলক অপরাধী আগ্রাসন’ মোকাবিলায় একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।

পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আজকের দিনে আমাদের আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজন। ইরানের সমস্ত জনগণকে হাতে হাত রেখে শক্তির সঙ্গে দাঁড়াতে হবে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। যত মতবিরোধ, জটিলতা কিংবা সমস্যাই থাকুক না কেন, আজকের দিনে সেগুলো একপাশে রেখে ঐক্য ও সংহতির শক্তি নিয়ে আমাদের এই গণহত্যামূলক অপরাধী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইরান কূটনীতিকে একটি সুযোগ দিয়েছে এবং আলোচনার ও সংলাপের পথ উন্মুক্ত রেখেছে।’

পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘শত্রু হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ইরান ও এর জনগণকে ধ্বংস করতে পারবে না। প্রতিটি লক্ষ্যভিত্তিক হামলার পর শত শত নতুন বীর সামনে আসবে, যারা পতাকা বহন করে পথ চালিয়ে যাবে।’

তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছি না। তবে আমাদের অধিকার আছে—পরমাণু শক্তি ও গবেষণা থেকে এমনভাবে উপকৃত হওয়ার, যা আমাদের জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।’ পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দাদাগিরি করছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থীভাবে ইসরাইলকে আমাদের দেশে আক্রমণের অনুমতি দিচ্ছে।’

গত শুক্রবার ইরানে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরাইল। এতে দেশটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। এর জবাবে ইসরাইল লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে দেয় ইরান, যার ফলে সংঘাত দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে। এই চলমান হামলা-পাল্টা হামলায় উভয় দেশেই অনেক বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।

ইরানের শাসনব্যবস্থাকে টার্গেট করার পর ইসরাইলে রাতভর হামলা: ইরানে শুক্রবার ভোর রাতে দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান দিয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। যেখানে টার্গেট করা হয়েছে ইরানের শাসনব্যবস্থাকে। হত্যা করা হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামরিক ব্যক্তিদের। আর এমন হামলার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, ‘ইসরাইলের লড়াই ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই তাদের (ইরান) শাসনের বিরুদ্ধে।’ এরপর পালটা হামলা চালিয়েছে তেহরান। রোববার রাতভর তেল আবিবে হামলা চালিয়েছে দেশটি।

জেরুজালেম থেকে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা হুগো বুশেগা জানিয়েছেন, তেল আভিভসহ ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যখন একেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করছিলো তখন জেরুজালেমের রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে পড়ে।

গতকাল সোমবার সকালেও উদ্ধারকারী দলকে দেখা গেছে ইসরাইলের প্রাণকেন্দ্রে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের খুঁজছেন।

উত্তরের বন্দর নগরী হাইফা, যেখানে একটি তেল পরিশোধনাগার রয়েছে, সেখানেও আঘাত হেনেছে ইরান।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ওপর সর্বশেষ হামলায় তেহরানের কুদস ফোর্সের একটি কমান্ড সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর পাশাপাশি সরকারি ভবন ও জ্বালানি স্থাপনাকে হামলার টার্গেট করা হয়েছে। যা মনে হচ্ছে ইরানের শাসনব্যবস্থাকেই নিশানা করেছে ইসরাইল। তারা আবাসিক এলাকাও আঘাত হানছে।

ইসরাইল ইঙ্গিত দিয়েছে যে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অভিযান হবে, অন্যদিকে ইরান বলছে, তাদের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে, এবং তারা আক্রমণের মধ্যে কোনো আলোচনা করবে না।

ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। যা ইরানি পাল্টা আক্রমণের কারণ হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরাইলী হামলায় উরানে ২২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।