পিস নাও ,রয়টার্স : ইসরাইলের বহুল সমালোচিত বসতি নির্মাণ পরিকল্পনা ই-১ প্রকল্প গত বুধবার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। ইসরাইলের ক্ষমতাসীন ডানপন্থি জোটের কট্টর জাতীয়তাবাদী মন্ত্রী স্মট্রিচ বলেছেন, বহু বছর আগে যা অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ই১ এর মাধ্যমে তা অবশেষে বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। এখন মুখের কথায় নয়, বরং কাজের মাধ্যমেই আলোচনার আসর থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা মুছে ফেলা হবে।

এই প্রকল্প অনুযায়ী, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। ২০১২ ও ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর চাপে এটি স্থগিত হয়েছিল। এতে প্রায় তিন হাজার ৪০০ নতুন আবাসিক ইউনিট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইসরাইলি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, কয়েক মাসের মধ্যে অবকাঠামো কাজ শুরু হতে পারে এবং এক বছরের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহে এই প্রকল্প ঘোষণা করেন স্মট্রিচ যা বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছেন।

অবশ্য, বিতর্কিত এই প্রকল্প পুনরায় চালু করা হলে বৈশ্বিক অঙ্গনে আরও বেশি একঘরে হয়ে পড়তে পারে ইসরাইল। এমনিতেই গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার শরে বিদ্ধ হয়ে আসছে তারা। দীর্ঘদিনের পশ্চিমা মিত্ররাও এখন তেল আবিবের পাশ ছেড়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ই -১ প্রকল্পের সমালোচনা করে জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক বলেছেন, বসতি স্থাপনের প্রকল্পটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বুকে ছুরি মারবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সবরকম বসতি স্থাপন কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য ইসরাইলি সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান রইলো।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ই-১ প্রকল্প স্থানীয় ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়গুলোকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক্সে লিখেছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বিভক্ত হবে এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করবে।

জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্রও বলেছেন, পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণ আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী। এটি বাস্তবায়িত হলে আলোচনার মাধ্যমে দুই রাষ্ট্র সমাধান ও ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

বসতি স্থাপনের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তরফ থেকে সরাসরি কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রবিবার ওফরা বসতি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ২৫ বছর আগে আমি বলেছিলাম, ইসরাইলের ভূমির ওপর আমাদের দখল নিশ্চিত করব, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঠেকাব এবং আমাদের উৎখাতের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করব। স্রষ্টার আশীর্বাদে আমরা সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেছি। আন্তর্জাতিক মহলে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বরাবরই সমালোচিত। তবে এসব নিন্দা পরোয়া না করে ইসরাইল বলছে, এসব এলাকায় তাদের ঐতিহাসিক ও বাইবেলসম্মত অধিকার রয়েছে এবং বসতিগুলো তাদের কৌশলগত নিরাপত্তা জোরদার করে।