এশিয়া
পাকিস্তানে পণবন্দী ট্রেনের সব যাত্রীকে হত্যার হুমকি বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে চলন্ত একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রীকে পণবন্দী করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মির জঙ্গীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে বেলুচ বিচ্ছন্নতাবাদীদের ছোড়া গুলীতে
Printed Edition
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে চলন্ত একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রীকে পণবন্দী করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মির জঙ্গীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে বেলুচ বিচ্ছন্নতাবাদীদের ছোড়া গুলীতে ট্রেনের চালক ও কয়েকজন যাত্রী আহত হন। পরে ট্রেনে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেন সশস্ত্র হামলাকারীরা। ডন, বিবিসি, এএফপি।
এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি দিয়েছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি। জঙ্গী গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জিয়ান্দ বেলুুচ হুমকি দিয়েছেন, যদি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বা পুলিশ কোনো ধরনের অভিযান চালানোর চেষ্টা করে তাহলে ট্রেনের সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে। তিনি দাবি করেছেন, অভিযানে গিয়ে সেনাবাহিনীর ছয় সেনা নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “যে কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের জবাব সমান শক্তিতে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ছয় পাক সেনা নিহত হয়েছে এবং কয়েকশ যাত্রী আমাদের জিম্মায় রয়েছে। বেলুচ লিবারেশন আর্মি এই অভিযানের পূর্ণ দায় নিচ্ছে।”
দেশটির রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, জাফর এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনের ৯টি বগিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার পেশওয়ারের উদ্দেশে যাওয়ার সময় সেটি হামলা চালিয়েছেন সশস্ত্র বন্দুকধারীরা।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করে আসা সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি ট্রেনে হামলার দায় স্বীকার করেছিল তাৎক্ষণিকভাবে।
এক বিবৃতিতে তারা ট্রেন জিম্মির ব্যাপারে বলেছে, তারা ট্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী-সহ যাত্রীদের জিম্মি করেছে। যদিও প্রাদেশিক সরকার কিংবা রেলওয়ের সরকারি কর্মকর্তারা যাত্রী ও নিরাপত্তাকর্মীদের বিএলএর জিম্মি করার দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
অপর এক বিবৃতিতে বিএলএ জানিয়েছে- তাদের যোদ্ধারা মাশকাফ, ধাদার, বোলানে পূর্বপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করেছে। দলটি জানিয়েছে - ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা রেলপথ উড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে জাফর এক্সপ্রেস থামতে বাধ্য হয়েছে। যোদ্ধারা দ্রুত ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং সমস্ত যাত্রীকে জিম্মি করে’। কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএলএ ঘোষণা করে, ‘যদি সামরিক বাহিনী কোনও অভিযানের চেষ্টা করে, তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ- শত শত জিম্মিকে হত্যা করা হবে এবং এই রক্তপাতের দায় সম্পূর্ণরূপে সামরিক বাহিনীর উপরন বর্তাবে।’ বিএলএ জানিয়েছে যে- তাদের বিশেষায়িত ইউনিট- মাজিদ ব্রিগেড, এসটিওএস এবং ফতেহ স্কোয়াড- এই আক্রমণটি চালিয়েছে এবং যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। টাইমস নাউ জানায়, হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএলএ জানিয়েছে, ‘এখনও পর্যন্ত ছয়জন সামরিক কর্মী নিহত হয়েছেন এবং শত শত যাত্রী বিএলএ’র হেফাজতে রয়েছেন।’
বেলুচ লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র জিয়ান্দ বেলুচ পুনর্ব্যক্ত করেন, এই অভিযানের দায় তাদের দল সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করছে। ওদিকে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, ম্যাচ-এর কাছে আব গাম এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সশস্ত্র অবস্থায় প্রায় ৬ জন ব্যক্তি ট্রেনে ফাঁকা গুলী করেছে। ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে গেছেন উদ্ধারকর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। হামলাকারীদের শনাক্ত করার অভিযান চলছে। রেল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, এর চালক গুরুত্বর জখম হলেও তিনি শঙ্কামুক্ত। তাদেরকে সহযোগিতা করতে একটি ইমার্জেন্সি ট্রেন পাঠানো হয়েছে। হামলার পর কর্তৃপক্ষ পেশোয়ার-কোয়েটা জাফর এক্সপ্রেস পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বন্ধ রেখেছে। শিবি হাসপাতালে ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। অর্থাৎ স্টাফদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রেলওয়ে কন্ট্রোলার মুহাম্মদ কাশিফ বলেন, এই ট্রেনে ছিল ৯টি কোচ। আরোহীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। ট্রেনের যাত্রী ও স্টাফদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।