ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত ইসরাইলী বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও খাবারের অভাবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন আরও ২৯ ফিলিস্তিনী বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ভোর থেকে এখন পর্যন্ত এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে বহু বৃদ্ধ, নারী ও শিশুও রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেইর আল বালাহর আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে চালানো হামলায় বহু হতাহতকে উদ্ধার করে আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আশরাফ আমরার তোলা ছবিতে দেখা যায়, রক্তাক্ত শিশুদের কোলে নিয়ে ছুটছেন আহত স্বজনেরা। আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি যেসব শিশু ও বৃদ্ধ মারা গেছেন, তাদের মধ্যে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে অনাহারে, যাকে ‘অনাহারজনিত মৃত্যু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে এবং হাজারো মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের বিভিন্ন শহরে চালানো ইসরাইলী বিমান হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন। এই হামলাগুলোকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ২০২৪ সালের নবেম্বরে হওয়া যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গাজায় সাত মাস ধরে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ২২ হাজার ১৯৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে গাজা সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আসল মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এরও বেশি, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ বহু মানুষকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে।

ক্ষুধায় শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুর এ সতর্কবার্তা এমন সময় এল, যখন গাজায় অবরোধ তুলে নিতে ও আক্রমণ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল তিন মাস পর সেখানে সীমিত আকারে ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এ অনুমতি পাওয়ায় চলতি সপ্তাহে উপত্যকাটিতে অনাহারক্লিষ্ট অসহায় ফিলিস্তিনীদের জন্য খাদ্যসহায়তা পৌঁছানো শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএর মুখপাত্র জেন্স লারকে গত বৃহস্পতিবার জানান, ত্রাণ নিয়ে অপেক্ষমাণ প্রায় ২০০ ট্রাকের মধ্যে ৯০টি গাজায় প্রবেশ করেছে। এগুলোতে ওষুধ, আটা ও পুষ্টিকর সামগ্রী আছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতা, লুটের আশঙ্কা ও ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে ত্রাণ বিতরণে বড় বাধার মুখে পড়ছে সংস্থাগুলো। তবে ফিলিস্তিনী রেড ক্রিসেন্ট জানায়, গাজার জনগণ এখনো সীমান্ত পেরিয়ে আসা ত্রাণ পাননি এবং এত কমসংখ্যক ট্রাক পাঠানো ‘মৃত্যুকেই যেন আমন্ত্রণ’ জানানো। কারণ, এতে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনী রেড ক্রিসেন্ট জানায়, গাজার জনগণ এখনো সীমান্ত পেরিয়ে আসা ত্রাণ পাননি এবং এত কমসংখ্যক ট্রাক পাঠানো ‘মৃত্যুকেই যেন আমন্ত্রণ’ জানানো। কারণ, এতে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘আমি প্রমাণ করতে পারি, কেউই (ত্রাণ) পাননি। কোনো বেসামরিক নাগরিক এখনো কিছুই পাননি। আসলে বলা যায়, অধিকাংশ ট্রাক এখনো গাজা-ইসরাইল সীমান্তের কেরেম শালোমে অবস্থান করছে। সেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু গাজায় প্রবেশ করেনি’, সাংবাদিকদের বলেন ফিলিস্তিনী রেড ক্রিসেন্টের সভাপতি ইউনিস আল-খাতিব। ইউনিস আল-খাতিব আরও বলেন, ‘(এমন অবস্থায়) যে হুড়োহুড়ি বা লুটপাট ঘটতে পারে, তা আড়াল করা খুব কঠিন।’

গাজায় অপুষ্টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে কয়েক মাস ধরেই ধ্বংসপ্রাপ্ত এ অঞ্চলের চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীরা সতর্ক করে আসছেন। লোকজনের স্থানচ্যুতি, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত বেকারিগুলো রান্নার গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বাজার ও দোকানে সীমিত খাদ্যপণ্যের অতিমূল্যের কারণে ত্রাণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

‘গত কয়েক দিনে আমরা অন্তত ২৯টি শিশুকে হারিয়েছি’, পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমাদান সাংবাদিকদের জানান। তাদের মৃত্যুকে তিনি অনাহার-সম্পর্কিত হিসেবে বর্ণনা করেন।