এনডিটিভি : মার্কিন শুল্কবৃদ্ধির জেরে চাপ বাড়লেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে না ভারত। রাশিয়া সফররত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার স্পষ্ট জানালেন, ভারতীয় কোম্পানিগুলো যেখানে সেরা দাম পাবে, সেখান থেকেই তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিনয় কুমার বলেন, নয়াদিল্লি দেশের ‘জাতীয় স্বার্থ’ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে থাকবে। গত রোববার তার এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। ভারতের সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। সাক্ষাৎকারে বিনয় কুমার জোর দিয়ে বলেছেন, নয়াদিল্লির অগ্রাধিকার হলো দেশের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ভারতীয় দূত স্পষ্ট করেছেন, নয়াদিল্লির জ্বালানি নীতি বাইরের চাপ নয়, বরং জনগণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভরশীল।

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। যদি বাণিজ্যিক লেনদেনের শর্ত সঠিক থাকে, তবে ভারতীয় কোম্পানিগুলি সেখান থেকেই তেল কিনবে যেখানে সেরা দামে পাওয়া যাবে।

ভারত ইতোমধ্যেই একাধিকবার জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। ভারতীয় কর্মকর্তারা আরও উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কিছু দেশও এখনও রাশিয়ার সঙ্গে সীমিত পরিসরে হলেও বাণিজ্য করছে। বিষয়টি বৈশ্বিক তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করেছে।

তার এই মন্তব্য এসেছে এমন এক প্রেক্ষাপটে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক।

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে যে, রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার মাধ্যমে ভারত মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে। তবে এই অভিযোগ ভারত দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায়, অযৌক্তিক এবং অযথার্থ’ আখ্যা দিয়ে বিনয় কুমার বলেছেন, ভারত সরকার দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতেই থাকবে।

ভারতীয় দূতের মন্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যদি আপনার সমস্যা থাকে ভারত থেকে তেল বা শোধিত পণ্য কেনা নিয়ে, তবে কিনবেন না। কেউ আপনাকে কিনতে বাধ্য করছে না।

ভারত বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ, আর রাশিয়া থেকে ছাড়ে তেল আমদানি ২০২২ সালের পর থেকে আরও বেড়েছে। ফলে ওয়াশিংটনের চাপ সত্ত্বেও নয়াদিল্লি স্পষ্ট করছে- জ্বালানি নিরাপত্তার প্রশ্নে আপোসের কোনও অবকাশ নেই।