বিবিসি : ভারতের প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ আদালতগুলোর একটি হলো এলাহাবাদ হাইকোর্ট। একসময় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও ভবিষ্যৎ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এই আদালতেই বিচারকার্যে অংশ নিতেন। এখন আদালতটি আলোচনায় রয়েছে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন কারণে।

এখানে বর্তমানে দশ লাখেরও বেশি মামলা ঝুলে আছে। ফৌজদারি বিচার থেকে শুরু করে জমি ও পারিবারিক বিরোধ- এ ধরনের বিভিন্ন মামলা দশকের পর দশক ধরে আটকে আছে। ফলে আদালতটি এখন দেশের সবচেয়ে অতিরিক্ত চাপের আদালতগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর এ কারণে উত্তর প্রদেশের হাজারো মানুষ আইনগত অনিশ্চয়তায় আটকে আছেন।

৭৩ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে আইনি লড়াই করছেন। তিনি ১৯৯২ সালে নিলামে জমি কিনেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী মালিক সেই বিক্রির বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছিলেন। মামলাটি আজও মীমাংসা হয়নি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি শুধু আশা করি, আমার জীবনকালেই আমার মামলার সিদ্ধান্ত হবে।’ এলেহাবাদ আদালতের এই সংগ্রাম ভারতের বিচারব্যবস্থার বৃহত্তর সংকটকেই যেন তুলে ধরেছে। কারণ আদালতে খুব কম বিচারক এবং ক্রমাগত মামলার চাপ দীর্ঘমেয়াদি বিলম্ব সৃষ্টি করছে। আদালতের অনুমোদিত বিচারক সংখ্যা ১৬০ হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেটি কখনোই পূর্ণ হয়নি। পুলিশের তদন্তে বিলম্ব, বারবার তারিখ পিছোনো এবং দুর্বল অবকাঠামো মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। প্রতিটি বিচারকের সামনে প্রতিদিন শত শত মামলা—কখনো ১,০০০-এরও বেশি থাকে। দিনে কার্যকরী সময় থাকে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা, ফলে প্রতি মামলায় সময় দেওয়া যায় এক মিনিটেরও কম। বাস্তবে অনেক মামলার শুনানিই হয় না।

আইনজীবীরা বলছেন, জরুরি বিষয়—যেমন: জামিন বা উচ্ছেদ স্থগিতাদেশ—আগে শোনা হয়। ফলে পুরোনো মামলাগুলো আরও পিছিয়ে যায়। সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ ফারমান নকভি জানান, আদালত অনেক সময় জরুরি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়, কিন্তু তা নিষ্পত্তি হয় না—এর মধ্যেই নতুন মামলা জমতে থাকে।

গত এপ্রিলে আদালত বুঝতে পারে পরিস্থিতির ভয়াবহতা, যখন এক ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে দেখা যায় মামলাটি ঝুলে আছে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এর মধ্যেই পাঁচ দ-প্রাপ্তের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। বাকি একজনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে আদালত স্বীকার করে—দেরি করে রায় দেওয়ায় তারা অনুতপ্ত। এ বছর শুরুর দিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের একদল আইনজীবী বিচারক নিয়োগ বাড়ানোর দাবিতে আবেদন করেন। তারা বলেন, বিচারকের ঘাটতিতে আদালত ‘অচল’ হয়ে পড়েছে।

গত জানুয়ারিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে বলেছে—এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলার তালিকা একেবারেই অনিশ্চিত। ফলে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।

শুনানির অনিশ্চয়তায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উত্তর প্রদেশের মানুষ। রাজ্যের বহু মানুষ কয়েকশ কিলোমিটার দূর থেকে প্রয়াগরাজে আসেন। অথচ অনেক সময় মামলার শুনানিই হয় না। আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিম উত্তর প্রদেশে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন, যাতে মানুষ সহজে ন্যায়বিচার পান। বর্তমানে লখরৌ শহরে একটি অতিরিক্ত বেঞ্চ রয়েছে। ১৯৮৫ সালে সরকারিভাবে একই সুপারিশ করা হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

রাজ্য সরকার সম্প্রতি নতুন বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করলেও অজ্ঞাত কারণে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, ২০০৯ সালের আইন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সব রাজ্যেই হাইকোর্টের অতিরিক্ত বেঞ্চ প্রয়োজন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে নতুন বেঞ্চ কার্যকর হতে পারে। কিন্তু দ্রুত সমাধানের জন্য অবিলম্বে আরও বিচারক নিয়োগ জরুরি।

জনসভায় হতাহতের পর শোকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন থালাপতি

ইন্ডিয়া টুডে : ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে নিজের রাজনৈতিক সমাবেশে পদদলিত হয়ে ৪০ জনের নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়ে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া থালাপতি বিজয়। তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) নামের রাজনৈতিক দলের প্রধান তিনি।

গত শনিবার সন্ধ্যায় তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম হয়। একপর্যায়ে অতিরিক্ত গরম ও হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এতে পদদলিত হয়ে নারী–শিশুসহ ৪০ জন মারা যান। আহত হন প্রায় ১০০ জন।

টিভিকে সূত্র জানায়, এ ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়েছেন বিজয় থালাপতি। তিনি এতটাই মুষড়ে পড়েছেন যে ওই ঘটনার পর থেকে কিছুই খাননি।

দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিজয়। পাশাপাশি আহত প্রায় ১০০ জনের প্রত্যেককে ২ লাখ রুপি দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

জনসভায় পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করেছে ভারতীয় পুলিশ। এতে টিভিকের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওই সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সিবিআই অথবা আদালতের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত চায় টিভিকে। আগামীকাল (সোমবার) আদালতে শুনানি। এরপর বিজয়ের সঙ্গে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দেখা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ওই সূত্র আরও জানান, ঘটনার পর বিজয়কে অবিলম্বে কারুর ছেড়ে যেতে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর তিনি ঘটনাস্থল ছেড়ে চেন্নাই চলে যান।

ইস্ট কোস্ট রোড (ইসিআর)-সংলগ্ন নীলঙ্কারাইয়ে বিজয়ের বাসভবনে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপর সোমবার সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে চেন্নাই পুলিশ। হুমকি পেয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেন। ডগস্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল বাসভবন প্রাঙ্গণে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সূত্র আরও জানায়, সম্ভাব্য কোনো হুমকি নেই জানার পর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বাসভবনের প্রতিটি অংশ সাবধানতার সঙ্গে পরিদর্শন করেছেন।

এর আগে হতাহতের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে টিভিকের দেওয়া এক পোস্টে ৫১ বছর বয়সী বিজয় মৃত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার হৃদয়ে যে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’