রয়টার্স : চীন-ভারত সীমান্তে ২০২০ সালে সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক পুনর্গঠনে উদ্যোগ নিচ্ছে দেশদুটো। গত মঙ্গলবার দু দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্মতিতে দুদেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে প্রবাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয়, দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রবাহ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দুদেশের সীমান্তবর্তী তিনটি স্থানে সীমান্ত-বাণিজ্য পুনরায় চালু করা হবে। আলোচনায় হিমালয় সীমান্তে সেনা প্রত্যাহার, সীমান্ত চিহ্নিতকরণের মতো বিষয়ও উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে ভারত।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় দুদেশের মধ্যে স্থগিত হওয়া সরাসরি ফ্লাইট পরিষেবা এতদিনে পুনর্বহাল হতে চলেছে। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্ত বিষয়ক একটি যৌথ কার্যকরী কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছেন দুদেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এই প্রক্রিয়ায় সীমান্তের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল নিয়ে আলোচনা হবে এবং পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে দ্রুত আরেক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। উভয় পক্ষ ২০২৬ সালে আবার চীনে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত পররাষ্ট্রনীতির চমক সামলাতে সুকৌশলে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক দৃঢ়করণে মনোযোগ দিয়েছে এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনে সম্প্রতি দুদিনের দিল্লি সফরে গিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। চলমান এই আলোচনার ২৪তম দফায় ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাপে ওয়াং ই বলেছেন, দুদেশের জনস্বার্থে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা জরুরি। আলোচনা ও সহযোগিতার পরিসর বৃদ্ধির মাধ্যমে আস্থা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আলোচনায় তিব্বতের ইয়ালুং জ্যাংবো নদীতে চীনের মেগা ড্যাম প্রজেক্ট (বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প) নিয়ে ভারতের উদ্বেগও তুলে ধরা হয়। এই নদীই ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত হয়েছে।
বাঁধের প্রভাব নিয়ে ভারতের ‘সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার’ দাবির জবাবে জরুরি পরিস্থিতিতে নদীর হাইড্রোলজিক তথ্য সরবরাহে সম্মত হয়েছে চীন। এছাড়া দুই দেশ বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সীমান্তবর্তী নদী নিয়ে পৃথক আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।পাশাপাশি ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাত– সার, বিরল খনিজ এবং টানেল বোরিং মেশিন সরবরাহে সহযোগিতার আশ্বাস চীন দিয়েছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ভারত ও চীনের মধ্যকার স্থিতিশীল, প্রত্যাশিত ও গঠনমূলক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চলতি মাসের শেষে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও) সম্মেলনে অংশ নিতে চীন সফর করবেন মোদি। সাত বছরের বেশি সময় পর চীন সফর করছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।