ফক্স নিউজ,আল জাজিরা, রয়টার্স: ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে ভারতের অনেক বিশ্লেষক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (ব্রোমান্স) মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে তৈরি হওয়া যেকোনো অস্থিরতা থেকে ভারতকে রক্ষা করবে। অতীতে ট্রাম্প ও মোদি একে অপরের পক্ষে সক্রিয় প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন, যৌথ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। একে অপরকে বন্ধু বলেও অভিহিত করেছেন। এমনকি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মোদি বিশ্বের প্রথম নেতাদের একজন হিসেবে হোয়াইট হাউসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।

কিন্তু মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে দিল্লি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রথমে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন। এরপর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে গতকাল বুধবার তা দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হতে মস্কোকে চাপে ফেলার চেষ্টার মধ্যে ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিলেন। ভারত ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না করলে বর্ধিত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ বর্ধিত শুল্কের খড়্গ এড়ানোর চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন দিল্লির কর্মকর্তারা। ভারত কয়েকটি মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমায়ও। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি হয়নি। আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই দেশটির ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এদিন বলেন, ‘আমরা আগেই স্পষ্ট করে জানিয়েছি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং দেশের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তাই, এমন সময় ভারতের পদক্ষেপের (রাশিয়া থেকে তেল আমদানি) জন্য তার ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, যখন অনেক দেশই নিজেদের স্বার্থে ওই একই কাজ করছে। আমরা আবারও বলছি, এ পদক্ষেপ অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অসংগত। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’ কিছু বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যচুক্তি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমেই টালমাটাল হচ্ছে। বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, ‘গত কয়েক দশকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এতটা নিচে নামেনি।’

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশ, যাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ, তারাসহ কয়েক ডজন দেশ তুলনামূলক কম শুল্কের শিকার। গত শনিবার এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পার হচ্ছে। সেখানে অস্থিরতার পরিবেশ বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের একটাই মানদণ্ড হওয়া উচিত, যা কিছু কিনব, তা যেন ভারতীয়ের ঘামে তৈরি হয়।’ এ বক্তব্য মোদি এমন একসময় দিয়েছেন, যখন ভারতীয় কর্মকর্তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিকভাবে মস্কোকে সহায়তা করছে। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে কত মানুষ রাশিয়ার অস্ত্রে মরছে, তার তোয়াক্কা ভারতীয়রা করছেন না। এ কারণে আমি ভারতের ওপর শুল্ক আরও বাড়াব।’

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোথায় দ্বন্দ্ব বাড়ছে : ট্রাম্প ও মোদি যতই একে অপরের প্রশংসা করুন; বাস্তবতা হলো, বাণিজ্য থেকে শুরু করে কৌশলগত অবস্থান পর্যন্ত বহু ক্ষেত্রে দুই দেশের মতপার্থক্য বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে যেখানে কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য ইস্যু দুই দেশের মধ্যে ঝামেলার উৎস হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছে, ভারত যেন আরও বাজার উন্মুক্ত করে, শুল্ক কমায় এবং বিশেষ করে তার (যুক্তরাষ্ট্রের) প্রযুক্তি, ওষুধ ও কৃষিপণ্যের সুরক্ষা বাড়ায়।

অন্যদিকে ভারত মনে করে, এসব চাপ তার কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। ট্রাম্পের আগেও দুই দেশ একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখেছিল। ভারত যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন পণ্যের দ্বিগুণ রপ্তানি করত। যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের বাজারে চাচ্ছিল আরও বেশি প্রবেশাধিকার। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত ১ এপ্রিল ট্রাম্প তাঁর দেশের প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর প্রথম দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কর্মকর্তারা একটি বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। তবে ই-কমার্সসংক্রান্ত নিয়মনীতি, ডিজিটাল ডেটা সরবরাহ ও চিকিৎসাসরঞ্জামের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতানৈক্যে দুই পক্ষের চুক্তির অগ্রগতি থেমে গেছে।

ভারত ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না করলে বর্ধিত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ বর্ধিত শুল্কের খড়্গ এড়ানোর চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন দিল্লির কর্মকর্তারা। ভারত কয়েকটি মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমায়ও। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি হয়নি। আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই দেশটির ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, ‘ট্রাম্প এটা চাপের কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করছেন। ভারত অন্যদের মতো মাথা নোয়ায়নি। কারণ, আমাদের কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রক্ষার দায় আছে।’ ভারতের প্রায় অর্ধেক জনগণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ ইস্যু মোকাবিলা করা দেশটির সব সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। ‘উভয় পক্ষ কঠোর অবস্থানে আছে। তবে শেষ পর্যন্ত এমন একটা সমাধানে পৌঁছানো জরুরি, যা দুই পক্ষেরই উপকারে আসবে’, আল–জাজিরাকে বলেন ত্রিগুনায়েত। রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। ইউক্রেনে কত মানুষ রাশিয়ার অস্ত্রে মরছে, তার তোয়াক্কা ভারতীয়রা করছেন না।

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক : ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্পের হতাশা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন পথ খুঁজছেন তিনি। সেই পটভূমিতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে ওয়াশিংটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিশানা হিসেবে দেখছে হোয়াইট হাউস। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উত্থান ঠেকাতে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখলেও মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ও জ্বালানিভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখায় ওয়াশিংটনের মধ্যে অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলো যখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একঘরে করেছে, এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধ–সংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে, তখন মোদি ২০২৪ সালে দুবার রাশিয়া সফর করেন। একই বছর জুলাইয়ে পুতিন তাঁকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত করেন। এদিকে রাশিয়া ভারতের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। একই সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে পারমাণবিক চুল্লি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি খাতে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভারত স্বল্প দামে বিপুল পরিমাণে রুশ তেল আমদানি শুরু করেছে।

কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি : গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। পরে গত মে মাসে পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলাকালে ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধ থামানোর দাবি করেন।

ট্রাম্প বলেন, দুই দেশকে তিনি যুদ্ধ থামাতে বলেছেন, অন্যথায় তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। পরে দাবি করেন, বাণিজ্যকে হাতিয়ার করেই তিনি যুদ্ধ থামিয়েছেন। মোদি সরকার বরাবর বলে এসেছে, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সব বিরোধ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করবে; তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে নয়। তাই ১০ মে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামানোর ট্রাম্পের দাবিকে কেন্দ্র করে মোদির বিরোধীরা তার একহাত নিচ্ছেন। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মোদি সরকার বলেছে, যুদ্ধবিরতি হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। ট্রাম্পের সঙ্গে তখন কোনো কথা হয়নি ও বাণিজ্যের প্রসঙ্গও আসেনি। কিন্তু ট্রাম্প ৩০ বারের বেশি বলেছেন, তিনিই শান্তি এনেছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উত্থান ঠেকাতে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখলেও মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ও জ্বালানিভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখায় ওয়াশিংটনের মধ্যে অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন উষ্ণতা : যুদ্ধবিরতির পরপরই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে স্বাগত জানান, যদিও তিনি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান নন। আগে এমনটা হয়নি। আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন উষ্ণতা ধরা পড়ে। এর আগে কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এখন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা সন্ত্রাসীদের ধরতে সাহায্য করায় পাকিস্তানকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। পাকিস্তানও ট্রাম্পকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয়। মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিন ট্রাম্প মোদিকে ‘চমৎকার মানুষ’ বললেও মুনিরকে ‘শান্তি আনার কারিগর’ বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আমি যুদ্ধ থামিয়েছি।’ ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর জ্বালানিচুক্তি হয়েছে। হয়তো একদিন তাঁরা ভারতের কাছেও তেল বিক্রি করবেন! এ পোস্টের পরের দিন ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ ও পাকিস্তানের পণ্য ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। পাকিস্তানের ওপর শুল্কের খড়্গ না চাপানোয় ট্রাম্পকে ইসলামাবাদ স্বাগত জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়দের নিগ্রহ ও ভিসা ইস্যু : গত ফেব্রুয়ারিতে মোদির হোয়াইট হাউস সফরের কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে আটক অবৈধ ভারতীয়দের হাত-পা শিকলে বাঁধা ছবি ভাইরাল হয়। শিকলে বাঁধা অবস্থায় উড়োজাহাজে করে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। প্রায় ৪০ ঘণ্টা তাঁরা শিকলে বাঁধা ছিলেন। এ ঘটনায় ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। শুধু বাণিজ্য নয়; অভিবাসী ইস্যুও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এইচ-১বি কাজের ভিসা নিয়েও কড়াকড়ি শুরু করেন ট্রাম্প। এ ভিসার প্রায় ৭২ শতাংশ ভারতীয়দের কাছে যায়। গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রযুক্তি খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলো ভারতের কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘ভারতের কর্মী নিয়োগের দিন শেষ।’ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে তিনি আহ্বান জানান, যেন তারা চাকরিতে মার্কিনদের অগ্রাধিকার দেয় এবং ভারত ও চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আউটসোর্সিং মডেল থেকে সরে আসে।

উত্তেজনায় সর্বশেষ সংযোজন রাশিয়ার তেল : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিকতম উত্তেজনার উৎস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মস্কোর কাছ থেকে দিল্লির তেল আমদানির বিষয়টি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সোমবার বলেন, ‘ভারত শুধু বিপুল পরিমাণ তেলই কিনছে না, বরং সেই তেল খোলাবাজারে বিক্রি করে মোটা মুনাফা করছে।’ এর আগে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার ঘটনাকে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার সঙ্গে যুক্ত করেন। ভারত এখন রোজ প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করে। চীনের পর এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রাশিয়াও ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র জোগানদাতাদের একটি। ‘ট্রাম্প খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়া থেকে তেল কিনে যুদ্ধের অর্থ জোগান দেওয়া ভারতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়’, বলেন মিলার। সানডে মার্নিং ফিউচার্স অনুষ্ঠানে মিলার আরও বলেন, ‘অনেকে শুনে চমকে যাবেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনার দিক দিয়ে ভারত এখন মূলত চীনের সঙ্গে সমান অবস্থানে আছে। এটি একেবারেই বিস্ময়কর এক তথ্য।’

সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী : অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধরের মতো কুগেলম্যানও মনে করেন, গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত অংশীদারী যতটা গভীর হয়েছে, এখন তা ততটাই তলানিতে ঠেকেছে। অর্থনীতিবিদ কুগেলম্যান বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হলো, সব পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলা। আর ট্রাম্প ভারতের ওপর বর্তমানে যে চাপ দিচ্ছেন, তা এ ভারসাম্য নীতির কারণেই; যেটা বাইডেন করেননি।’

সাবেক কূটনীতিক ত্রিগুনায়েত বলেন, ‘ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশের কৌশলগত স্বাধীনতা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ডিএনএতেই রয়েছে।’ কুগেলম্যান মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদে ভারত আশা করবে, বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাজি হলে ট্রাম্পের ক্ষোভ মুছে যাবে। ‘তাই এখন ভারত পুতিনের ওপরে যুদ্ধ থামানোর জন্য চাপ বাড়াতে চেষ্টা দ্বিগুণ করতে পারে’, বলেন কুগেলম্যান। তিনি আরও বলেন, ‘কারণ, ট্রাম্প রাশিয়াকে নিয়ে তাঁর হতাশা ঝাড়ছেন দৃশ্যত ভারতের ওপরে।’