ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত বন্দুকধারীদের খুঁজতে গতকাল বুধবার সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া, সন্ত্রাসীদের অনুসন্ধান অভিযান ত্বরান্বিত করতে হামলায় জড়িত তিন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, হামলাকারীদের সবাই লস্কর-ই-তইয়েবার সদস্য। ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার দক্ষিণ কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং একজন নেপালের নাগরিক ছিলেন। এছাড়া দুইজন স্থানীয় বাসিন্দাও রয়েছেন। এ ঘটনাকে ২০০০ সালের পর ওই অঞ্চলে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে, গতকালের হামলার জন্য দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামের একটি গোষ্ঠী। ধারণা করা হয়, এটি পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার গোপন শাখা। হামলার সময় সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর পাওয়া মাত্রই সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার ভোরে দিল্লী পৌঁছান তিনি। তিনি বলেছেন, এই নৃশংস হামলার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের বিচার হবেই। কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। সেখানে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

নিহতদের দেহ বাড়ি প্রেরণের আগে তাদের ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন অমিত শাহ্। হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের কাছে ভারত মাথানত করবে না। হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা প্রথমে পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। এরপর পুরুষদের গুলী করে হত্যা করে। নিহতদের মরদেহ যার যার বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, আটকে পড়া পর্যটকদের বাড়ি ফিরতে যেন ঝক্কি পোহাতে না হয়, তাই এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিটের দাম সহনীয় রাখার নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। কাশ্মীরে হামলার পর দিল্লী, মুম্বাইসহ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহরে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে সরকার।

কাশ্মিরের হামলাস্থলে সাংবাদিকদের যেতে বাধা ভারতের

বিবিসি : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মিরের পাহালগামে গতকাল মঙ্গলবার ভয়াবহ সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ জন নিহত হন। যাদের সবাই পর্যটক ছিলেন। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় এক মুসলিম যুবকও প্রাণ হারিয়েছেন। যিনি সেখানে বেড়াতে যাওয়া মেহমানদের ঘোড়ায় চড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাহালগামের বৈসারান তৃণভূমিতে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। তবে হামলাস্থলে কোনো সাংবাদিককে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সাংবাদিক যোগিতা লিমায়ে। তিনি সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। কিন্তু পথের মাঝে তাদের আটকে দেওয়া হয়। তিনি বলেছেন, তারা এ মুহূর্তে ঘটনাস্থল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন।

সেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হয়ে কোনো সাংবাদিককে পাহালগামে যেতে দিচ্ছেন না। যদিও বেসামরিক মানুষের চলাচলে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। এই সাংবাদিক জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের কাছে যেতে না দেওয়ায় আহতদের যে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেখানেও তারা যেতে পারেননি।

কাশ্মির হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানের

টাইমস অব ইন্ডিয়া : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভয়াবহ হামলার একদিন পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তান। তারা বলেছে, এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত নয়। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সংযোগ নেই। ভারতের কথিত রাজ্যগুলোতে নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মির, ছত্রিশগড়ে, মণিপুরে এবং দক্ষিণে বিদ্রোহ চলছে। এগুলো বিদেশী কোনো দেশের হস্তক্ষেপ নয়, স্থানীয় বিদ্রোহ।” জম্মু-কাশ্মিরের পাহালগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। যাদের সবাই বেসামরিক ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

ভারত অভিযোগ করে থাকে তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির অংশে যেসব হামলা হয় সেগুলোতে পাকিস্তানের মদদ থাকে। তবে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গতকাল যে হামলা হয়েছে সেটি সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের অত্যাচারের ফল। তিনি বলেন, “এই বিদ্রোহীরা তাদের অধিকার চাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মুসলিমদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। আর মানুষ এর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।” খাজা আসিফ পাল্টা অভিযোগ করেন ভারত পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। যেটির প্রমাণ তাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, “ভারত বেলুচিস্তানে অস্থিরতায় মদদ দিচ্ছে। আমরা একবার নয়, একাধিকবার প্রমাণ দেখিয়েছি। কিন্তু পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতার পেছনে বার বার ভারতের হাত ছিল।”

তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়। তবে ভারত সরকার তার জনগণকে মৌলিক অধিকার দিচ্ছে না তাই মানুষ এমন বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন বলে দাবি খাজা আসিফের। তিনি বলেন, “যদি সেনাবাহিনী ও পুলিশ মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংসতা করে, তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাহলে এমন হবে। এসবের জন্য দায়ী করার জন্য পাকিস্তান একটি সুবিধাজনক অজুহাতে পরিণত হয়েছে।”