নতুন যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পেশ
রয়টার্স, বিবিসি , আনাদোলু : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিমান হামলায় গাজার খান ইউনিসের বেশ কয়েকটি বাড়ীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ জনও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫১ হাজার ২৫০ জনে পৌঁছেছে। গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী হামলায় কমপক্ষে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ হাজার ২৪০ জনে পৌঁছেছে বলে সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী আক্রমণে আহত হওয়া আরও ৬২ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৩১ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। রেছেন। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা সম্পর্কে অবগত এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনী কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে নতুন এই প্রস্তাব সম্পর্কে জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তার মতে, প্রস্তাবে পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য একটি যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় ইসরাইলী জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনী বন্দিদের মুক্তি, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি এবং গাজা থেকে পুরোপুরিভাবে ইসরাইলী সেনাদের প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
আলোচনার জন্য জ্যেষ্ঠ হামাস প্রতিনিধি দলের কায়রোতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। কায়রো আলোচনায় হামাসের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন এর রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ এবং প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া। গত মাসে ইসরাইল গাজায় পুনরায় বোমাবর্ষণ শুরু করলে, সবশেষ যুদ্ধবিরতিটি ভেস্তে যায়। উভয় পক্ষই অবশ্য এর জন্য একে অপরকে দায়ী করে। ইসরাইল মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব সম্পর্কে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। এই আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন হামাস কয়েকদিন আগেই ইসরাইলের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ঐ প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্র হওয়ার শর্তে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শনিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এবং সকল জিম্মি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ শেষ করবেন না। আর হামাস চায় ইসরাইল যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিক, তারপর তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে। ২০০৭ সাল থেকে গাজার শাসনক্ষমতায় আছে হামাস। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই ফিলিস্তিনী কর্মকর্তা বিবিসিকে আরও বলেন, ‘জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে’ অনুমোদন পাওয়া যে কোনও ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের হাতে গাজার শাসনভার তুলে দিতে প্রস্তুত হামাস। এটি হতে পারে পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ (পিএ) অথবা নতুন গঠিত প্রশাসনিক সংস্থা।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে গাজার শাসনব্যবস্থায় পিএ’র কোনও ভূমিকাই তিনি মানেন না। যদিও এই নতুন প্রস্তাব সফল হবে কি না, তা বলা এখনই সম্ভব নয়, সূত্রটি এটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বলেছে হামাস ‘অভূতপূর্ব নমনীয়তা’ দেখিয়েছে। এদিকে কায়রোতে অবস্থিত ফিলিস্তিনী দূতাবাস তার কর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছে, যারা গাজা থেকে মিসরের হাসপাতালে চিকিৎসা স্থানান্তর ও মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করছিলেন- তারা যেন তাদের পরিবার নিয়ে গাজা সীমান্তসংলগ্ন মিসরের আরিশ শহরে স্থানান্তরিত হন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালায়। এর জবাবে ইসরাইল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এখন পর্যন্ত এ অভিযানে অন্তত ৫১ হাজার ২৪০ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে- যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।