রয়টার্স: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে চায় রাশিয়া। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখতে ২০১০ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ‘নিউ স্টার্ট চুক্তি’ স্বাক্ষর করে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তির মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা। তার আগে পুতিনের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব এলো। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, পুতিনের প্রস্তাব ‘খুবই ভালো’ শোনাচ্ছে। তবে তিনি যোগ করেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই প্রস্তাবের ব্যাপারে বক্তব্য রাখবেন।

এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার শেষ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি। এতে কেবল একবার পাঁচ বছরের বর্ধিতকরণের সুযোগ ছিল, যা ২০২১ সালে পুতিন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কার্যকর করেছিলেন। প্রস্তাবটি এসেছে এমন সময়ে যখন ইউক্রেন ট্রাম্পকে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বোঝানোর চেষ্টা করছে। পুতিন বলেন, নিউ স্টার্ট চুক্তির অধীনে নির্ধারিত প্রধান সংখ্যাগত সীমাবদ্ধতাগুলো ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর আরও এক বছরের জন্য মেনে চলতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।

তিনি আরও বলেন, পরে পরিস্থিতির বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে এই স্বেচ্ছায় আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলো বজায় রাখা হবে কি না। ট্রাম্প জুলাই মাসে বলেছিলেন যে, নিউ স্টার্ট চুক্তিতে নির্ধারিত মোতায়েনকৃত কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের সীমাবদ্ধতাগুলো চুক্তির মেয়াদ ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার পরও বজায় রাখতে চান তিনি। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন যে, সীমাবদ্ধতাগুলো শেষ হলে উভয় পক্ষ কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন বাড়ালে অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, মোতায়েনকৃত কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ১,৫৫০ এবং ডেলিভারি ভেহিকল (মিসাইল, সাবমেরিন ও বোমারু বিমান)-এর সংখ্যা প্রত্যেক পক্ষের জন্য ৭০০-এর মধ্যে সীমিত থাকবে। পুতিন বলেছেন, তার এই প্রস্তাব বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধের স্বার্থে এবং এটি ওয়াশিংটনের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনার সূচনা করতে সহায়তা করতে পারে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ কেবল তখনই কার্যকর হবে যদি যুক্তরাষ্ট্র একইভাবে কাজ করে এবং বিদ্যমান প্রতিরোধক্ষমতার ভারসাম্যকে দুর্বল বা লঙ্ঘন করে এমন পদক্ষেপ না নেয়।

ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে সম্মত হওয়ার জন্য ট্রাম্পের চাপের মুখে রয়েছেন পুতিন। প্রস্তাবটি মস্কোর নীতিতে একতরফা পরিবর্তন বলে মনে হচ্ছে, কারণ এতদিন পর্যন্ত তারা জোর দিয়ে এসেছে যে এ ধরনের বিষয়ে তারা কেবল তখনই ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে যদি সামগ্রিক সম্পর্ক যা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তীব্র মতভেদের কারণে ক্ষতিগ্রস্তÍউন্নত হয়।