ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দুদিনে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। গত শুক্রবার জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান প্রাণহানি এবং আহত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে যারা মৌলিক খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে নিহত হচ্ছেন। আনাদোলুর, দ্য গার্ডিয়ান, টাইমস অব ইসরাইল, হারেৎজ, সিএনএন, এএফপি।

মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক সাংবাদিকদের বলেন, খাদ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত এবং আহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফারহান হক বলেন, ‘আমাদের মানবাধিকার সহকর্মীদের মতে, গত দুই দিনেই ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ত্রাণবাহী বহরের পথে বা ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর বিতরণ কেন্দ্রের কাছে আরও শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।’

তার মতে, ‘খাবার খোঁজার জন্য কখনো কাউকে জীবনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য করা উচিত নয়।’ ফারহান হক আরও বলেন, ‘বেসামরিকদের সর্বদা সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং সম্প্রদায়-স্তরের সাহায্য বিতরণকে বাধাগ্রস্ত না করে সহজতর করতে হবে।’ জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, ‘মাসব্যাপী জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক পণ্যের অভাব সংকটকে আরও গভীর করেছে, যা কেবল গাজায় ‘অনিয়ন্ত্রিত সাহায্য প্রবাহ’- এর মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মানবিক কর্মীদের নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য দ্রুত, নিরাপদ এবং অবাধ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ আমাদের দলগুলোকে যে পথ দিয়ে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেয় সেগুলো প্রায়শই বিপজ্জনক, যানজটপূর্ণ বা দুর্গম।’ যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইলী সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অবিরাম বোমাবর্ষণের ফলে উপত্যকাটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ইসরাইলী হামলায় আরো ৮৩ ফিলিস্তিনী নিহত: গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা জুড়ে ইসরাইলী হামলায় অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৩ জন সাহায্যপ্রার্থীও রয়েছেন। বর্বর এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫৫৪ জন। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া, পূর্ববর্তী ইসরাইলী হামলায় ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে আরও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলী আগ্রাসনে এ পর্যন্ত মোট ৬০ হাজার ৩৩২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৩ জন। গত ২৭ মে থেকে ইসরাইল নতুন ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি চালু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৮৩ জন সাহায্যপ্রার্থী নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৯ হাজার ২১৮ জনের বেশি। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

গাজায় গণহত্যার নিন্দা জানালেন ইসরাইলী লেখক গ্রসম্যান ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির জনপ্রিয় লেখক ও শান্তিকামী কর্মী ডেভিড গ্রসম্যান। তিনি বলেন, ুআমি এই শব্দটি বলছি এক ভাঙা হৃদয় নিয়ে।” ইতালির দৈনিক লা রিপাবলিকা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শুক্রবার গ্রসম্যান বলেন, অনেক বছর ধরে আমি গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। কিন্তু এখন, যেসব ছবি দেখেছি এবং যেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি- তারপর আমি আর চুপ থাকতে পারি না। তিনি বলেন, ুআমি এই শব্দটি উচ্চারণ করছি সীমাহীন যন্ত্রণা ও এক ভাঙা হৃদয় নিয়ে। এই শব্দটি যেন এক ধ্বংসাত্মক তুষারধস- একবার বলা শুরু করলে এটা কেবল বড় হতে থাকে, আরও ধ্বংস, আরও কষ্ট তৈরি করে।”

গাজায় বিমান থেকে খাবার ফেলল ছয় দেশ: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমানের মাধ্যমে খাবার ফেলেছে ছয়টি দেশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) ১২৬টি প্যাকেজ ফেলা হয়। এগুলো পাঠিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, মিসর, জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

গাজার মানুষের জন্য দিনে যে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন সেগুলোর তুলনায় ১২৬টি প্যাকেজ খুবই নগন্য। দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, শুক্রবার ছয়টি দেশকে তারা গাজায় খাদ্য সহায়তা ফেলতে দেয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) দেয়া এক পোস্টে এই যৌথ উদ্যোগের জন্য জর্ডান, আমিরাত এবং জার্মানিকে ধন্যবাদ জানান। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ুশুধু বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা যথেষ্ট নয়। গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি মোকাবেলায় ইসরাইলকে অবশ্যই পূর্ণ মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার দিতে হবে।”

গত সপ্তাহ থেকেই ইসরাইল গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলার অনুমতি দেয়। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থা এই পদ্ধতির সমালোচনা করছেতাদের মতে, এটি ব্যয়বহুল, অকার্যকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের সাহায্য সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)–এর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি বলেন, গাজায় একটি ট্রাকে করে গাজায় সহায়তা পাঠাতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, বিমান দিয়ে সেটি করলে ১০০ গুণের বেশি অর্থ লাগে। এছাড়া বিমানের চেয়ে ট্রাক দ্বিগুণ ত্রাণ পরিবহণ করতে পারে।

তিনি বিমান থেকে খাদ্য ফেলাকে ‘অপর্যাপ্ত’ ও ‘অকার্যকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেছেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার ক্ষেত্রে সবার মধ্যে যে রাজনৈতিক ইচ্ছা আছে সেটি সড়কপথে প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রেও থাকা উচিত। লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, গাজা সীমান্তে ত্রাণ নিয়ে ৬ হাজার ট্রাক অপেক্ষা করছে। কিন্তু দখলদার ইসরাইলের কারণে সেগুলো প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। ইসরাইল গাজায় প্রবেশের আগে সবগুলো ট্রাক পরীক্ষা করতে চায় বলেও জানান তিনি।