উপসাগরীয় অঞ্চলে চার দিনের সফরে গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সফরের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাণিজ্যিক চুক্তি সই। সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের একটি প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রয়টার্স, বিবিসি

ট্রাম্পের এ সফরে তাঁর সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও করপোরেট নেতৃত্বের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে যোগ দেন ট্রাম্প। এরপর আজ বুধবার তিনি কাতারে যাবেন। কাল বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে উপসাগরীয় অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তাঁর এ সফরের মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো। পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দিতে ট্রাম্প সম্প্রতি রোমে গিয়েছিলেন, তা পূর্বনির্ধারিত ছিল না। তাই সৌদি আরবের মাধ্যমেই দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর শুরু হলো।

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক সময়ের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম। দেশটির আধুনিককালের প্রেসিডেন্টরা প্রথম বিদেশ সফরের জন্য সাধারণত যুক্তরাজ্য, কানাডা কিংবা মেক্সিকোকে বেছে নেন। গত জানুয়ারিতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেছিলেন, আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা, এ অঙ্ক বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২১ লাখ ৫২০ হাজার কোটি টাকা) করা হবে। সৌদি আরব আরও বেশি মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বলেও আশা করেন ট্রাম্প।

গাজা যুদ্ধ বা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নয়, বরং মার্কিন অর্থনীতির জন্য বড় অঙ্কের নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করাই তার এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মূল উদ্দেশ্য। টেসলা সিইও এবং ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্কসহ প্রভাবশালী মার্কিন ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে তিনি প্রথমে রিয়াদে সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে অংশ নেবেন। এরপর বুধবার কাতার এবং বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। তবে তিনি ইসরাইল সফর করছেন না। ফোরামের উদ্বোধনী ভাষণে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ বলেন, ‘যদিও জ্বালানি আমাদের সম্পর্কের মেরুদণ্ড, সৌদি আরবে বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক সুযোগ বহু গুণ বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, “ফলে যখন সৌদি ও আমেরিকানরা একসঙ্গে কাজ করে, তখন ভালো কিছু ঘটে এবং বেশিরভাগ সময় অসাধারণ কিছু ঘটে।” ফোরামের শুরুতে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দীর্ঘ ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে ভিডিওতে উড়ন্ত ঈগল ও বাজপাখি দেখানো হয়। একটি রাজকীয় হলের সম্মুখ সারিতে বসে ছিলেন ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, ব্ল্যাকস্টোনের সিইও স্টিফেন এ. শোয়ার্টজম্যান, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান এবং খালিদ আল-ফালিহ। দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মজবুত। কারণ সৌদি জ্বালানি সরবরাহ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা দেয়।

ট্রাম্প বলেন, তিনি হয়তো কাল বৃহস্পতিবার তুরস্কে যাবেন, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি আলোচনা হতে পারে। রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার পর এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এমন এক সময়ে তিনি এই সফর করছেন যখন বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ট্রাম্পের এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একসঙ্গে একাধিক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে জানুয়ারিতে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে আগামী চার বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দাবি করবেন।