এএফপি: লাদাখের আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করে দিলেন। তাঁরা বলেছেন, ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার জন্য কারা দায়ী, তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। সেই তদন্তের ভার দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতিকে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুকসহ গ্রেপ্তার করা সবার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

সোনম ওয়াংচুককে কেন্দ্রীয় সরকার ‘পাকিস্তানি চর’ বলেছে। বলেছে, জনতাকে তিনিই সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লেহ্ অ্যাপেক্স বডির (ল্যাব) চেয়ারম্যান থুপস্টান ছেওয়াং ও কো-চেয়ারম্যান শেরিং দোরজি গতকাল সোমবার আলোচনা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও গ্রেপ্তার করা সবাইকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন না। লাদাখের দুটি জেলা। লেহ ও কারগিল। ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এ ধূসর পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা বৌদ্ধ ও মুসলমান। জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবিতে দুই সম্প্রদায়ই একমত।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী–অধ্যুষিত লেহ্র আন্দোলনকারী নেতাদের এ সিদ্ধান্তকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন মুসলিমপ্রধান কারগিলের নেতারা। কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) নেতা সাজ্জাদ কারগিলি একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, ল্যাবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাঁরা সম্পূর্ণ একমত। তাঁদেরও দাবি, ওয়াংচুকসহ গ্রেপ্তার করা সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। সাজ্জাদ কারগিলি বলেন, পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার দাবি নিয়ে কোনোরকম আপস সম্ভবপর নয়। ল্যাব ও কেডিএ এই বিষয়ে অনড় থাকবে। দাবি না মেটা পর্যন্ত তাঁরাও আলোচনা স্থগিত রাখার পক্ষে। লাদাখের দুটি জেলা। লেহ্ ও কারগিল। ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এ ধূসর পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা বৌদ্ধ ও মুসলমান। জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবিতে দুই সম্প্রদায়ই একমত। এ ছাড়া তাঁরা চান স্থানীয় লোকজনের চাকরির জন্য এক পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন ও লোকসভায় আরও একটি আসন বৃদ্ধি। বর্তমানে গোটা লাদাখের জন্য লোকসভায় আসন রয়েছে একটি।

ল্যাবের সিদ্ধান্ত ও তাকে কেডিএ সমর্থন জানানোর পর গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, আলোচনার জন্য সরকারের দরজা খোলা থাকছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গড়ে দেওয়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ইতিমধ্যে অনেক বিষয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। সরকার চায়, আলোচনা অব্যাহত থাকুক। আগামী ৬ অক্টোবর সেই আলোচনার পরবর্তী দিন। কিন্তু ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু, বহু মানুষের আহত হওয়া ও সোনম ওয়াংচুকসহ অনেকের গ্রেপ্তার পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। লেহ্তে এখনো কারফিউ চলছে। যদিও কয়েক ঘণ্টার জন্য তা শিথিল করা হচ্ছে।

ল্যাব নেতা থুপস্টান ছেওয়াং ও শেরিং দোরজি এবং কেডিএ নেতা সাজ্জাদ কারগিলি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, এত দিন ধরে চলা আন্দোলন একমুহূর্তের জন্যও অশান্ত হয়নি। সোনম ওয়াংচুকের আন্দোলনের শক্তি শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ, অনশন। তিনিও সব লাদাখির মতোই শান্তিপ্রিয় মানুষ, গান্ধীবাদী। কাজেই ২৪ সেপ্টেম্বর সহিংসতার জন্য কারা প্রকৃত দায়ী, তা জানা দরকার।

এই নেতারা বলেন, আন্দোলনের পেছনে ‘বিদেশি হাত’ থাকার অভিযোগ নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক। লাদাখ অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। এখানকার প্রত্যেক মানুষ দেশপ্রেমিক। লাদাখের দুই দিকে দুই দেশের সীমান্ত। কারগিলের দিকে পাকিস্তান, চীনের দিকে লাদাখের পূর্বাঞ্চল। যুদ্ধের সময় সেনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাদাখিরা লড়াই করেছেন। তাঁরা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ। সেই মানুষদের ‘বিদেশি’ তকমা দেওয়ার অর্থ তাঁদের বিপথচালিত করার চেষ্টা।

সাজ্জাদ কারগিলি বলেছেন, তাঁরা পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছেন বিধানসভা পাবেন বলে। পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া সম্ভব না হলে অন্তত বিধানসভা দেওয়া হোক; যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার পাওয়া যায়, বর্তমানে তা নেই। যাবতীয় সিদ্ধান্ত ছয় বছর ধরে কেন্দ্রই নিচ্ছে। লাদাখি নেতারা জানাচ্ছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ থাকাকালীন তাঁরা অন্যদের অধীন ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের স্বাতন্ত্র্য বজায় ছিল, জনবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটেনি। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার পর তাঁরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পেলেও স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে ফেলছেন। জনজাতি এলাকায় যেকেউ এসে জমি কিনছেন, জনবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলছেন। এটা রুখতেই তাঁরা ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। আন্দোলনকারী নেতারা বলেছেন, ভোটের সময় বিজেপি নিজেই এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অথচ এখন সরকার তা গায়েই মাখতে চাইছে না। লাদাখের জনগণ মনে করছেন, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে।